আসন্ন বাজেট সমৃদ্ধ হোক চিকিৎসা খাত

প্রকাশ:

Share post:

পৃথিবীর প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব বাজেট প্রণয়নে আর্থিক নীতি-পরিকল্পনায় করোনার আঘাতকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিতে হবে। কারণ, বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় পুরো পৃথিবী আজ অবদমিত। এরই মধ্যে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা হবে। সহজ কথায় বাজেট হচ্ছে, একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়। সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন তাদের বেতন দিতে হয়। আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট বানানো ও অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ নানা ধরনের উদ্যোগও নিতে হয়। সুতরাং, একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত টাকা ব্যয় হবে, সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে চিকিৎসা খাতের উপর। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এবারের বাজেটে স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্ব পাবার কথা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও এর অভিঘাত থেকে উত্তরণ এবং চিকিৎসা খাতে সর্বোচ্চ প্রণোদণা বরাদ্দকরণ।

আমরা জেনে থাকি, বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আর্থিক নীতি প্রণয়ন। সামগ্রিক অর্থে একটি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় আর্থিক নীতি ও কৌশলের সমন্বয় হচ্ছে বাজেট। সরকারি -বেসরকারি, ছোট বড় সব খাত এবং জাতীয় জীবন থেকে ব্যক্তিগতজীবন-  সব কিছুর ওপরই বাজেটের প্রভাব পড়ে। ইতোমধ্যেই সরকার আসন্ন বাজেটের রূপরেখা প্রণয়নে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের সাথে আলোচনা করছে। কিন্তু সবারই প্রত্যাশা,  বাজেটে যেন সমৃদ্ধ হয় চিকিৎসা খাত।আসন্ন বাজেটে কেন বেশি বরাদ্দ দিতে হবে চিকিৎসা খাতে? – দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে, গত এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের করোনায় মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্তও হচ্ছে রের্কড সংখ্যক মানুষ। উপমহাদেশের দিকে তাকালে দেখতে পাব, গোটা ভারতবর্ষ আজ করোনায় বিপর্যস্ত। ভারতে করোনার থাবায় বাদ যাচ্ছে না কেউই, দেখা দিয়েছে অক্সিজেন সংকট, চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে ভারতীয় করোনা ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশের জন্য চরম উদ্বেগের বিষয়। প্রসঙ্গক্রমেই বাংলাদেশ ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধ রেখেছে। কিন্তু তারপরেও অনেক ঝুঁকি থেকে যায়। পারতপক্ষে এখন থেকেই বাংলাদেশের মানুষের অত্যন্ত স্বাস্থ্য  সচেতন থাকা জরুরি। চিকিৎসা খাতকে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবী, সেই সাথে অক্সিজেন মজুতকরণসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। সুতরাং, পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা।

আরও পড়ুন:  স্বশরীরে পরীক্ষা নিবে হাবিপ্রবি

করোনার এই সময়ে করোনা আক্রান্ত এবং করোনায় আক্রান্ত না হয়েও বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। তাই দ্রুততম সময়ে মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দেয়ার সমস্ত আর্থিক ব্যয়ভার আসন্ন বাজেটে উল্লেখিত থাকা অপরিহার্য।  করোনার এই সংকটের মধ্যে রাষ্ট্র খাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোদমে দেউলিয়া। তাই এই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে একটা স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকা অত্যাবশ্যক।  চিকিৎসা সেবাদানকারী জনবল (চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মী) দ্রুততম সময়ে নিয়োগ দিয়ে কীভাবে নূন্যতম প্রয়োজনীয় সংখ্যা অর্জন করা যায় এবং দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর সংখ্যা এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে কিভাবে সেটা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া যায় সেটার সার্বিক দিক নির্দেশনাসহ আর্থিক সাহায্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে আসন্ন বাজেটে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায়  প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক চাহিদা মাথায় রেখে এই বাজেট তৈরী করতে হবে।

এমতাবস্থায়, আসন্ন বাজেটের দুটি মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। একটা হল, কোভিডের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দেয়া এবং আর একটা হল, কোভিডের ছোবল থেকে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুরক্ষা নিশ্চিত করা। উক্ত ভাবনাগুলো আসন্ন বাজেটে সন্নিবেশিত থাকা অত্যাবশ্যক।

স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে এই মহূর্তে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান, ভারত, ভুটান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় যথাক্রমে- মাথাপিছু ১২৯, ১৩৭, ১৬৭,২৬৭, ২০১, ৩৬৯,১৯৯৬ ডলার। কিন্তু আমাদের দেশে এর পরিমাণ মাত্র ৮৮ ডলার, যা পাকিস্তানের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ এবং আফগানিস্তানের অর্ধেক। এ কারনেই এই দেশের জনগণকে এখনও তাদের চিকিৎসার ৬৮-৭২ শতাংশ নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয়। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মতে, এই ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬৪-৬৬ লক্ষ্য মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যায়। তাই কিভাবে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ানো যায় সেই বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কে পর্যালোচনায় রাখতে হবে। আসন্ন বাজেটে কোভিডে ক্ষতিগ্রস্থ আমাদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি দিতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি গুলোর মধ্যে প্রথমেই কৃষিকে রাখতে হবে। কৃষিখাতের বাজেট বরাদ্দকরণসহ কৃষির স্বাভাবিক উন্নয়ন ধরে রাখতে সমস্ত প্রকার আশু সুব্যবস্থা আসন্ন বাজেটে করতে হবে।

আরও পড়ুন:  করোনায় আরও ৪ জনের মৃত্যু শনাক্তের হার বেড়ে ১১.৬৮ শতাংশ

কোভিড-১৯ এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশ্বকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে যাবে তা এখনো অজানা। করোনার কারনে অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ে যাচ্ছে বিশ্বসহ আমাদের বাংলাদেশ। সরকার ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যেন তা বাস্তবায়ন হয় আমরা তা প্রত্যাশা করি। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতেই বিশাল বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করতে হবে। তবে আশঙ্কার বিষয়, বরাদ্দ বাড়লেও স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয় তার ব্যবস্থা কতটা করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। পরিশেষে প্রত্যাশা রাখি, বাজেটে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করার বিষয়ে পদক্ষেপ জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়ন ও গবেষণায় জোর দিতে হবে। বাজেটকে জনসম্পৃক্ত ও কল্যাণমুখী করতে হবে। চিকিৎসা খাতের যাবতীয় উপকরণ ও চিকিৎসা খাতকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত করতে সমস্ত পদক্ষেপ আসন্ন বাজেটেই নিতে হবে। তবেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভাল থাকবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হবে।

রনি সরকার

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

spot_img

সংবাদ সারাদেশ

ফুলবাড়ীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

বিপুল মিয়া,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম )প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শিক্ষক- কর্মচারী নির্যাতন ও হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।...

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিনকে সংবর্ধনা ও প্রকাশনা উৎসব

বিপুল মিয়া,বার্তাবুলেটিন: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংকলন ‘The...

ফুলবাড়ীতে আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ পালিত

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দ্বন্দ্বে কোন আনন্দ নাই, আপোষ করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোন চিন্তা...

ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ গ্রীন ভয়েসের ৭ দাবি

পরিবেশ সুরক্ষায় পুরনো যানবাহনের ব্যবহার বন্ধ করা ও কালো ধোঁয়া নির্গমন ঠেকাতে ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ ৭ দফা...

Discover more from bartabulletin.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading