বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চরম নেতৃত্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা ও গবেষণা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক মূখ্য আলোচ্য বিষয়! কিন্তু দূঃখের বিষয় হচ্ছে সম্প্রতি দূর্নীতি ও অনিয়ম সেখানে বাসা বেঁধেছে, বিশেষ করে ভিসি কেন্দ্রিক। ইউজিসি তে নাকি ডজন খানেক বর্তমান ভিসি ও সাবেক ভিসি বিষয়ক দূর্নীতির তদন্ত চলছে? একটা দেশের উচ্চশিক্ষা কমিশন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী পদের দূর্নীতির তদন্ত করে, তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুনগত মান কিংবা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তলানিতে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই নেতৃত্ব সংকটের দায়ভার কার? কাঁদা ছোড়াছোড়ির এই দেশে কেউই এর দায় নিতে রাজি নয়। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে উদাসীনতাই কিন্তু এই ধরনের সংকট তৈরি করে। প্রকৃত গবেষক, অধ্যাপক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ কি তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই? নাকি উনারা উপেক্ষিত/অবহেলিত? নাকি উনারা ভিসি পদের জন্য যোগ্য নাহ? নাকি অযোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য পদে ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়োগ দিয়ে এই সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কোন বিশেষ অজানা কারনে?
এত অনিয়মের ভিড়ে সম্প্রতি প্রকাশিত স্পেনভিত্তিক বিশ্বখ্যাত একাডেমিক ও গবেষণা বিষয়ক সিমাগো র্যাঙ্কিংয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেশসেরা গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শীর্ষ দুই ও তিনে আছে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ।
এই সাফল্যের অন্যতম পথিকৃত আমার স্নাতকোত্তর রিসার্চ সুপারভাইজার ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। অধ্যাপক ইসলামের একান্ত প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালের গবেষণা প্রবন্ধ ও গবেষণার স্কোপাস রেটিং সূচকে দেশের সকল বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে সাফল্যের মুখ দেখেছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এই ছোট বিশ্ববিদ্যালয় টি কিন্তু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকলে সফলতা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
এই একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সফল ও গুগল সার্চেবল বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও গবেষণার প্রোফাইল নির্ভর ভিসি নিয়োগ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অক্সিজেন স্বরুপ। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়া শুরু করলে আমাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে নাহ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বরেণ্য ও যোগ্য অধ্যাপকদের ডেকে ডেকে অনুরোধ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য, সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।
ভিসি নিয়োগের জন্য শিক্ষকদের মন্ত্রণালয়ে কিংবা আমলাদের দ্বারস্থ কেন হতে হবে? উপাচার্য নিয়োগ এর জন্য যোগ্য গবেষক ও অধ্যাপক দের কে ইউজিসি/শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুরোধ করবেন। এটাই হোক সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের নিয়ম। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন প্রকৃত উচ্চ গবেষণা প্রোফাইলের বরেণ্য শিক্ষকদের কে নেতৃত্বের সুযোগ দিলে আমাদেরকে পশ্চিমা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোজন যোজন পিছনে পরে থাকতে হবে নাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০৪১ সালের স্বপ্নের বাংলাদেশ হোক শিক্ষা ও গবেষণা সমৃদ্ধ সম্ভাবনার বাংলাদেশ।
পরিবর্তনের শুরু হোক শিক্ষা ও গবেষণার হাত ধরেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্ব সংকটের সমাধান হোক আমাদের সচেতন ও বুদ্ধিভিত্তিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশের শিক্ষার সংকট। ভিসি পদ হোক সম্মানের, গবেষকের, বিদ্যানের, দানবের নয়!