হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষাসৈনিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জননেতা আব্দুর রৌফ চৌধুরীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম.কামরুজ্জামান।
মরহুমের ১৪তম মৃত্যুবাষিকীতে তার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এছাড়াও মরহুমের সমাধিতে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সকালে আব্দুর রৌফ চৌধুরী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত মরহুমের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় অনুষ্ঠিত কুরআনখানী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে যোগদানের পূর্বে তিনি এ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজসহ বিভিন্ন শাখার পরিচালক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, আব্দুর রৌফ চৌধুরী ১৯৫২ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে মেট্টিকুলেশন, এরপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। সিরাজগঞ্জে পড়ার সময়েই তিনি ভাষা আন্দোলনে একজন সক্রিয় সংগঠক ছিলেন এবং এজন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়। পরে এইচএসসি পরীক্ষা দেন ঢাকা কলেজ থেকে। সেখানে পড়াবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দিনাজপুরে ফিরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন।
তিনি পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর দিনাজপুর (দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্র সংসদের নেতৃত্ব দেন। ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ এর পূর্ববর্তী সময়ে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন একাধারে ১৫ বছর। জননেতা আব্দুর রৌফ চৌধুরী ১৯৯০ সালে বোচাগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ আসন (বীরগঞ্জ- কাহারোল) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০২ সালে জোট সরকারের শাসনামলে ১৫ আগস্ট সেতাবগঞ্জে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তিনি। এ আঘাত থেকে আর পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি এ নেতা। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এসব অঞ্চলে পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে নেতৃত্ব দেন।
আব্দুর রৌফ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দূত হিসেবে ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় জোনে। সেই সঙ্গে বোচাগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বোচাগঞ্জ উপজেলাকে পাক-হানাদার মুক্ত করেন। প্রয়াত আব্দুর রৌফ চৌধুরীর একমাত্র পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।