হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: করোনায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দোকানপাট থেকে শুরু করে সবকিছুই কখনো বা খোলে,আবার কখনো বা বন্ধ হয় লকডাউন মেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে করোনার সম্পর্ক যেনো গলায় গলায়! দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেও খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
১৯৯৬৫-৬৬ সালে করোনার মতো এক মহামারি প্লেগ এসেছিলো পৃথিবীতে। সময়টি ছিলো নিউটনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সময়৷ সেসময় অপটিকস, ক্যালকুলাস, মহাকর্ষ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন সেলফ কোয়ারান্টাইনে থাকা মহাবিজ্ঞানী নিউটন।
তেমনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই এই সময়টাকে কাজে লাগিয়েছেন। কেউ আবিষ্কার করেছে যে সে গান গাইতে পারে, কেউ আঁকাআঁকি করেছে আবার কেউবা প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। এসব শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি বড় অংশ রয়েছে যারা নিজ বিভাগের বিষয়ের প্রতি সহশিক্ষায় মনোযোগ দিয়েছে। তেমনই একজন আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ পড়াশোনা করছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে। করোনায় বসে না থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছেন আবু সাঈদ। এসময় তিনি অর্জন করেছেন দুটি বিশেষ দক্ষতা৷ প্রথমত, তিনি শ্রমিকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করার কৌশল রপ্ত করেছেন। যেহেতু তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থী, আর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের পার্থক্য হলো তার শহরে কিংবা গ্রামে, ধনী-দরিদ্র সকলের সাথে মিলে-মিশে কাজ করে।
দ্বিতীয়ত, আবু সাঈদ অর্জন করেছেন ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতা। করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর থেকে সময় যাচ্ছিল না আবু সাঈদের। প্রথমে ভাবলেন ফ্রিল্যান্সিং করবেন। ল্যাপটপ কিনে বেশ জোরদিয়ে এবার আমাকে ফ্রিল্যান্সিং করতেই হবে এমনটা মনস্থির করছিলেন আবু সাঈদ। কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি ঠিকঠাক।
করোনার মাঝামাঝি সময়ে একদিন ঢাকার আশুলিয়ায় বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করে আবু সাঈদের প্রতিবেশী। আবু সাঈদ কালক্ষেপণ না করে সেই বাড়ির রাজমিস্ত্রীর কাজে যোগ দিলেন। যেহেতু তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করছেন সুতরাং বাড়ির কাজে শ্রমিক এবং প্রকৌশলীর খুব কাছে থেকে থেকে শিখে নিলেন সয়েল টেস্ট থেকে পাইলিংসহ সবকিছু। পাইলিং এ কোন পাথর, রড কত টন লাগবে, সিমেন্ট কত ব্যাগ,বালি সব কেনাকাটা করেছেন আবু সাঈদ। একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জন্য এইধরনের অভিজ্ঞতা বেশ কাজে দিবে বলেই পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে এসব রপ্ত করেছেন আবু সাঈদ।
আবু সাঈদের এই ব্যবহারিক কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সময়কাল ছিলো ছয়মাস। শ্রমিকদের যেকোনো কাজের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া, কাজ শেষে একই টঙে বসে চা খেতে খেতে পরিবারের খোঁজ নেয়াসহ একজন প্রকৌশলীর বাস্তবি জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন আবু সাঈদ।
এ ব্যাপারে আবু সাঈদ বলেন, ‘ক্লাসে বসে যা শিখি আমরা যদি তা বাস্তব পরিবেশে প্রয়োগ করতে করতে শিখে যাই তবেই সেটা কাজে দিবে। এছাড়া পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন ক্যারিয়ারে বেশ কাজে দেয় বলেই মনে করি। কেননা কবির ভাষ্যমতে, বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র’।
করোনা পৃথিবীতে এসে নিয়ে গেছে অনেক কিছু। কিছুই দেয়নি এমনটা কিন্তু নয়। পৃথিবীতে মহামারি আসুক কিংবা মহাপ্রলয় আসুক যারা সময়ের মূল্য বুঝতে পারে তারা ঠিকই প্রয়োজনীয় কিছু অর্জন করে নেয়। এরকম আবু সাঈদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সময়ের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার আমাদের উজ্জ্বলতর জীবন এবং ক্যারিয়ার উপহার দিতে পারে। তবে এরজন্য প্রয়োজন সময়ের সঠিক ব্যবহার।
এ.মান্নান/হাবিপ্রবি/বার্তাবুলেটিন