এম আব্দুল মান্নান: বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর আয়োজনে “মানব কল্যাণে জিনোম এডিটিং: কৃষি থেকে স্বাস্থ্য সেবা পর্যন্ত” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) কৃষি অনুষদীয় ভবনের কনফারেন্স রুমে উক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইবিজি এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলামের সভাপতিত্বে মূল আলোচক হিসেবে ছিলেন ভারতের কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর ফসল বিভাগের বিজ্ঞানী ড. কুতুবউদ্দিন মোল্লা। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল বাসেত মিয়া।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. কুতুব উদ্দিন মোল্লা বলেন, জিনোম এডিটিং ব্যবহার করে সিস্টিক ফাইব্রোসিস, হান্টিংটন’স ডিজিজ এবং থ্যালাসেমিয়া সহ বিভিন্ন জিনগত রোগের চিকিৎসা ভারত বা বাংলাদেশেই করা সম্ভব। HIV, ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মার মতো সংক্রামক রোগের সহজ সাবলীল সমাধান হতে পারে জিনোম এডিটিং।
তিনি আরও বলেন, জিনোম এডিটিং জিন থেরাপি বা জিন প্রযুক্তি নামেও পরিচিত, জীবন্ত কোষের ডিএনএ পরিবর্তন করার একটি ক্ষমতাধর পদ্ধতি। এটি বিজ্ঞানীদের নির্দিষ্ট জিনগুলিকে সংশোধন করতে, মুছে ফেলতে অথবা নতুন জিন যোগ করতে সহযোগিতা করে। ফসলকে ভাইরাস, ছত্রাক, পোকামাকড় এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, কীটনাশকের ব্যবহার কম, এইসব কিছুই জিনোম ইডিটিং (ক্রিস্পার কাস) ব্যবহার করে করা সম্ভব। ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা এবং নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে আধুনিক ও যুগোপযোগী আরো অত্যাধুনিক পদ্ধতি জিনোম এডিটিং এর মাধ্যমে করা যেতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. আব্দুল বাসেত মিয়া জানান, জিনোম এডিটিং প্রযুক্তিকে কম্পিউটারের ন্যায় জীববিজ্ঞানের সর্বত্র ব্যবহারের করা হলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে। এসময় তিনি কৃষি অনুষদে জিন এডিটিংসহ অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তিসমূহ স্নাতক কৃষিতে নতুন কোর্স হিসেবে চালু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে আইবিজিই’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, জিনোম এডিটিং শুধুমাত্র কৃষি ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসেনি বরং রোগ নির্ণয় ও বিশ্বব্যাপী গবেষণার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করেছে। তিনি বাংলাদেশকেও এই আধুনিক গবেষণার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন। সেই সাথে বাংলায় লিখিত তার বাংলাদেশের প্রথম বই “জিনোম এডিটিং” সর্বস্তরের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে পড়ার জন্য আহবান করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন এই বই পড়লে জিনোম এডিটিং বাংলাদেশের মানুষের কাছে সহজ উপলুব্ধ ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
সেমিনারে উপস্থিতি ছিলেন আইবিজিইর পরিচালক প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম (জিপিবি); প্রফেসর ড. মোঃ আহসানুল হক স্বপন (ইএনটি); প্রফেসর ড. ফাতেমা খাতুন (ইএনটি); প্রফেসর ড. মোঃ মোরশেদুর রহমান (ডিপিএস); প্রফেসর ড. মোঃ মহিউদ্দিন (সিবিটি); প্রফেসর ড. শাহ মোঃ নাইমুল ইসলাম (আইবিজিই); কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. গণেশ সাহা, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান হায়দার ইকবাল খান (সিবিটি); সহযোগী অধ্যাপক ডিপালি রানী গুপ্তা (আইবিজিই); সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান ড. নুরে আলম সিদ্দিকী (বিএমবি); সহযোগী অধ্যাপক ও প্রধান ড. আফসানা হোসাইন (পিএলপি); সহকারী অধ্যাপক ড. আফজাল শেইখ(বিএমবি) সহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, গবেষক, পিএইচডি ফেলো, মাস্টার্স ও অনার্স শিক্ষার্থীবৃন্দ।
সেমিনার শেষে ড. কুতুব উদ্দিন মোল্লা আইবিজিইর ল্যাব ও গবেষণা কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখেন এবং চলমান গবেষণার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি আইবিজিইর অত্যাধুনিক ল্যাবকে বিশ্বমানের এবং পৃথিবীর প্রথম সারির ল্যাবগুলোর একটি বলে মন্তব্য করেন। এরপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান এবং গবেষণা পরিচালক প্রফেসর ড. আবিয়ার রহমানের সাথে মতবিনিময় করেন।
You must be logged in to post a comment.