সৈয়দ হাদি তর্কবাগীশ: মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিশ্ব মানবতার প্রবাদ পুরুষ বাঙালির মনের মানুষ মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ।
আওয়ামী লীগের প্রথম যুগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একক গুরুত্বপূর্ণ কোন নেতা ছিলেন না আওয়ামী লীগ যখন গঠিত হয় তখন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন মাত্র। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলো ” ধর্ম নিরপেক্ষ ” আওয়ামী লীগের জন্য এককভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে দায়ী করে আসছে। অজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা ‘ মানে ইসলাম বিরোধীতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এই ইসলাম বিরোধী তত্ত্বের আবিষ্কারক, তিনি এদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতা আমদানি করেছেন।প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগে ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা’ তত্ত্বটি এসেছে দুই জন দেওবন্দ পাস মাওলানার হাত ধরে।
দেওবন্দ উপমহাদেশের বিখ্যাত মাদ্রাসা। দেওবন্দ আলেমদেরকে খুবই সম্মানের সাথে দেখা হয় ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং বিশ্ব মানবতার প্রবাদ পুরুষ , রক্তাত্ত সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক,ভাষা আন্দোলনের সিংহ পুরুষ , মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি প্রবাদ পুরুষ মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানী এই সংগঠনের নাম প্রস্তাব করেন ” পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ” এবং তিনিই সভাপতি হন ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সভাপতি ছিলেন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাহেব ,মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ চেয়ে বেশ কয়েক বছরের বড় ছিলেন এবং অপর দিক থেকে মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ ,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর চেয়ে ১৯ বছরের বয়সে বড় ছিলেন । পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ এরপর শেখ মুজিবুর রহমান দলের সভাপতি হন এবং তাজউদ্দিন আহম্মদ দলের সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৫৫ সালে মহান সমাজ সংস্কারক মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ তখন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সহ সভাপতি। তিনি সংগঠন নাম থেকে ” মুসলিম ” শব্দটি বাদ দেয়ার উদ্যোগ নেন। ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ” মুসলিম ” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ “। সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া তখন মুখের কথা ছিল না। যুক্তি তর্কের বাঘ মাওলানা তর্কবাগীশ কঠিন তর্ক যুদ্ধের মাধ্যমে মাওলানা ভাসানীকে বুঝাতে সক্ষম হন । এতে মাওলানা ভাসানী ভীষণ খুশি হন এবং রাজী হন সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিতে। শেখ মুজিবুর রহমান তাতে এক মত পোষন করেন।
মাওলানা ভাসানী এবং মাওলানা তর্কবাগীশ দুজনেই দেওবন্দের ছাত্র। ১৯০৭ সালে মওলানা ভাসানী দেওবন্দে যান। দুবছর দেওবন্দে অধ্যয়ন করেন। বিপ্লবী মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ দেওবন্দে এবং লাহোরে এশরাতুল ইসলাম কলেজে পবিত্র কোরানের তাফসির ও বুখারী শরীফ এর তাফসির অধ্যায়ন করেন। এই দুই কিংবদন্তি প্রাজ্ঞ মাওলানার হাতে আওয়ামী লীগ বড় হয়েছে , আওয়ামী লীগের মূল নীতি আদর্শগুলো রচিত হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগকে ইসলামের শত্রু বলে গালি দেন তারা জানেন না, আওয়ামী লীগ দুই প্রবীণ প্রাজ্ঞ মাওলানার হাতেই সৃষ্ট সংগঠন ।
বাংলাদেশে আর কোন দল দেওবন্দ পাস কোন মাওলানার হাত ধরে গড়ে উঠেনি। আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতা জিনিসটি সেক্যুলারিজমের প্রচলিত ধারণা থেকে ভিন্ন। পাকিস্তানে ভিন্ন দুটি ভাষা থাকায় উর্দুশিক্ষিত মোল্লা মুন্সিরা বিভ্রান্ত ছিলেন। সেক্যুলার এর উর্দু প্রতিশব্দ হচ্ছে- “ লা দ্বীনিয়াত ” অর্থাৎ ধর্মহীনতা; সুতরাং আওয়ামী লীগের সেক্যুলারিজম হচ্ছে ধর্মহীনতা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ধর্মহীনতার কথা কখনো বলেনি। তারা বলছে, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা। অর্থাৎ যার যার ধর্ম, তার তার কাছে । তারা যেভাবে সেক্যুলার হতে চান আওয়ামী লীগের সেক্যুলারিজম তেমন নয়। আওয়ামী লীগ যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে,সেটা ঠিক সেক্যুলারিজমও নয়।ধর্মনিরপেক্ষতার কোন নির্দিষ্ট ইংরেজি প্রতিশব্দ কার্যত নেই।
” সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে দেওয়া ভাষণে আওয়ামী লীগের ধর্ম নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের কারো নেই।হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।ধর্ম অত্যন্ত পবিত্র জিনিস।আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।”
–সৈয়দ হাদি তর্কবাগীশ (মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ এর নাতি )/বার্তাবুলেটিন