কুড়িগ্রামে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এর প্রিন্ট কপি উম্মোচন

প্রকাশ:

Share post:

বার্তাবুলেটিন ডেস্ক: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সম্প্রতি কুড়িগ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাষণের হুবহু প্রিন্ট ভার্সন উন্মোচন করা হয়। ৪৭ বছর পর উত্তরবঙ্গ জাদুঘর ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের উদ্যোগে প্রেসক্লাবের সৈয়দ শামসুল হক হলরুমে উন্মোচন করা হয় এই ভাষণটি।

১৯৭৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। কুড়িগ্রাম কলেজ মাঠে সাজানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ। প্রিয় নেতা আসবেন বলে লাখো মানুষের অপেক্ষা। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নেতা মঞ্চে উঠে হাত নাড়লেন। উচ্ছ্বসিত লাখো বাঙালি তখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে বঙ্গবন্ধু তাদের একেবারেই সামনে! সেদিনের স্মৃতিগুলো এভাবেই বর্ণনা করছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু।

কুড়িগ্রামে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল:-

কুড়িগ্রামের ভাই ও বোনেরা,
আমি জানি যে অনেক দূরের থেকে আপনারা কষ্ট করে আসছেন। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে কালকে থেকে এসে বসে আছেন। দেখতে চান। তাই সামনের দিকে এগিয়ে আসতে চান সেটা আমি বুঝি । আপনাদের কাছে আমার বলার কি আছে, যখন আমি দেখি যে দূরদূরান্ত থেকে আপনারা শুধু আমাকে দেখবার জন্য ছুটে আসেন। ভালোবাসা আপনারা জীবনভর আমাকে দিয়েছেন, ভালোবাসা যে কত বড় জিনিস যা জীবনে কেউ পেয়েছে কিনা বা কোন নেতা পেয়েছে কিনা আমার জানা নাই।

কুড়িগ্রামের ভাইয়েরা বোনেরা

গত স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আপনার যে কষ্ট স্বীকার করেছেন, যে অত্যাচার সহ্য করেছেন, যে গ্রামকে গ্রাম পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী জ্বালিয়ে দিয়েছিল, তখন এই কুড়িগ্রামের ভাইয়েরাও সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান বর্বরতার বিরুদ্ধে আপনারা রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ২৫ বছর পর্যন্ত পাকিস্তানের বর্বর শাসকরা আমার সোনার বাংলাকে লুট করে শেষ করে দিয়েছে। সম্পদ লুট করেছে অর্থ লুট করেছে আমার যা কিছু ছিল তা লুট করেছিল। তারপরে গত যুদ্ধের সময় আমার সমস্ত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে। হ্যাঁ সব নিতে পারে কিন্তু বাংলার মাটি নেবার পারে নাই, সব নিতে পারে কিন্তু বাংলার সোনার মানুষকে ধ্বংস করতে পারে নাই। সব নিতে পারে কিন্তু বাংলা মানুষের আদর্শ ধ্বংস করতে পারে নাই।

ইনশাআল্লাহ দেশ যখন স্বাধীন হয়েছে, দেশ যখন মুক্ত হয়েছে, পঙ্গপালের দলকে যখন আমরা শেষ করতে পেরেছি, দুঃখ-কষ্ট আমাদের আছে। কারোর কিছুই নাই, জেল থেকে বের হয়ে এসে যখন আমি দেখলাম যে কিছুই নেই, কি করে আমার সাড়ে সাত কোটি লোক বাঁঁচবো, কোথায় কাপুড়, কোথায় তেল, কোথায় খাবার, কোথায় পেট্রোল, কোথায় বীজ, কোথায় আমার মানুষের লাঙ্গল, কোথায় আমাদের মানুষের গরু, যার যেখানে যা আছে সবকিছু শেষ করে দিয়ে গেছে। তবুও মানুষকে বাঁচাতে হবে। কি করে আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে সত্যি আমি বলতে পারি না। বোধ হয় আল্লাহর মেহেরবানী ছিলো। তাই কোনোমতে দুমুঠো করে এনে বাংলার গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। কোটি কোটি টাকার রিলিফ, ১০০ কোটি টাকা আমি গ্রামে দিয়েছি। দুঃখ হয় মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই।

আরও পড়ুন:  বর্নিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উম্মোচন
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ উম্মোচন

এখনো একদল লোক আছে যারা গরিবকে লুট করে খায়, রিলিফের মাল চুরি করে খায়, এদের আমি বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে চাই। ধ্বংস করতে চাই। এরা মানুষ না এরা মানুষের অযোগ্য, এরা পশুর চেয়েও অধম।

মানুষকে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে ভালো না বেসে মানুষের সেবা করা যায় না।। মানুষকে ভালবাসার মধ্যে কৃপণতা আর স্বার্থ থাকে সে স্বার্থ নিয়ে মানুষকে ভালোবাসা যায় না। আর ভালোবাসা পাওয়াও যায় না । আমার দুঃখ হয়, আজও পাকিস্তানি বর্বররা আমার তিন চার লাখ বাংলার মানুষকে আটকায় রেখেছে, তারা ছাড়ছে না। তারা ত্রিশ লাখ লোকের জীবন নিয়েও শান্তি পায় নাই। আমি বার বার অনুরোধ করেছি। আমি বিশ্ব দুনিয়ায় বিবেকের কাছে অনুরোধ করেছি, সমস্ত দুনিয়ার বড় বড় দেশের কাছে অনুরোধ করেছি এবং বলেছি, তোমরা আমার বাংলার মানুষকে ফেরত দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দাও, যখন এই যুদ্ধ হয়, যখন আমার বাংলার মানুষকে হত্যা করে, তখন তোমরা অনেকে দেখেও দেখো নাই। কিন্তু এ-ই সাউথ ইস্ট এশিয়ায়, এই উপমহাদেশে শান্তি বজায় করতে হলে, আমি শান্তিতে বাস করতে চাই। কারো সাথে আমার দুশমনি নাই। যদি আমার গায়ে এসে কেউ পড়ে, যদি কেউ আঘাত করার চেষ্টা করে, আমার দেশ এতো ছোট নয়, মানুষ যতটুকু মনে করুক না কেনো আমার দেশের সাড়ে সাত কোটি লোক, আমার দেশ দুনিয়ার অষ্টম বৃহৎ রাষ্ট্র (জনসংখ্যার অনুপাতে) । আমার মানুষ একতাবদ্ধ, আমার দেশ সংগঠিত, আমার দেশ ও দেশের জনসাধারণ যা আমি বলি তাই তারা শুনে। বাংলার মানুষদের নিয়ে ভুট্টো সাহেব আর খেলার চেষ্টা করো না।।

আপনাদের কাছে আমি আবেদন করবো, যা আপনারা সত্য পথে চলবেন, ন্যায়ের পথে চলবেন, অন্যায়ের মোকাবিলা করবেন, দেশকে ভালোবাসবেন এবং দেশকে গড়বেন এবং আপনারা যদি পয়দা করতে পারবেন, তাহলে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করতে পারবেন। ভবিষ্যৎ আমরা যারা আছি আমাদের বয়স হয়েছে, আমরা ভোগ করতে না পারি কিন্তু এমন কিছু করে যাই যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা আর মানুষের কাছে হাত পাততে না হয়। ওরা সুখ সাচ্ছন্দ্য বাস করতে পারে। সোনার দেশ, যেনো সোনার বাংলা হয়ে যায়।
খোদা হাফেজ। জয় বাংলা।

আরও পড়ুন:  স্মার্টফোন কিনে না দেয়ার বাবা-মার সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা

৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু নিয়ে উত্তরবঙ্গ যাদুঘর নামে সংগ্রহশালা তৈরি করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রাজজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্রাহাম লিংকন। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের তাৎপর্য এখনো আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি বক্তব্যই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এই ভাষণের মাধ্যমে কুড়িগ্রামবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলেন। তিনি দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে চেয়েছেন যা বর্তমানে তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই পথে হাঁটছেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি এসেছিলেন। সেই মঞ্চে কুড়িগ্রাম তৎকালীন মহকুমা এলাকার সকল সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তিনি ভোটের কথা বলেননি।

ভাষণটিকে অন্যন্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সবার হাতের কাছে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি ছড়িয়ে দিতে প্রিন্ট সংস্করণ বের করা হয়েছে। এটি নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে বলেও মনে করেন তিনি।

সৌজন্যেঃ বার্তা২৪

spot_img

সংবাদ সারাদেশ

ফুলবাড়ীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

বিপুল মিয়া,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম )প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শিক্ষক- কর্মচারী নির্যাতন ও হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।...

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিনকে সংবর্ধনা ও প্রকাশনা উৎসব

বিপুল মিয়া,বার্তাবুলেটিন: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংকলন ‘The...

ফুলবাড়ীতে আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ পালিত

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দ্বন্দ্বে কোন আনন্দ নাই, আপোষ করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোন চিন্তা...

ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ গ্রীন ভয়েসের ৭ দাবি

পরিবেশ সুরক্ষায় পুরনো যানবাহনের ব্যবহার বন্ধ করা ও কালো ধোঁয়া নির্গমন ঠেকাতে ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ ৭ দফা...

Discover more from bartabulletin.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading