ঢাকারবিবার , ১১ আগস্ট ২০২৪
  1. আনন্দধারা
  2. আন্তর্জাতিক
  3. ইসলাম ও জীবন
  4. কৃষি ও অর্থনীতি
  5. ক্যাম্পাস
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. গল্প ও কবিতা
  9. গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব লিংক
  10. চট্রগ্রাম
  11. চাকুরী বার্তা
  12. জনমত
  13. জাতীয়
  14. ঢাকা
  15. পরিবেশ ও বিজ্ঞান

ক্ষমতার উত্থান-পতনে এ এক নতুন বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
বুলেটিন বার্তা
আগস্ট ১১, ২০২৪

এম আব্দুল মান্নান: পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনা এবং বৈষম্যের প্রতিবাদে ১৯৭১এ যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তাঁর জন্য বহু মানুষকে জীবন উৎস্বর্গ করতে হয়েছিল। যারা এই যুদ্ধে জীবন উৎস্বর্গ করেছিলেন তারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর থেকেই পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তার মধ্যে ছিল ভূমি সংস্কার, রাষ্ট্রভাষা, অর্থনীতি ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে দুই প্রদেশের মধ্যে বৈষম্য, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এতদ্বসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়। এই বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে বাঙালির দীর্ঘ আন্দোলনের পথ ধরে নয় মাস মরণপণ যুদ্ধ করতে হয়েছিল। পৃথিবীব্যাপী এমন নজির নেই যেখানে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ ও ২ লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানী হয়েছে। যেভাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, সামরিক ও বেসামরিক লোকেরা বাঙালিদের জানমালের ওপর নৃসংসভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে আর কেউ মানুষ হয়ে মানুষের ওপর এমন ধ্বংসলীলা চালিয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেই স্বাধীন স্বদেশ বিনির্মাণের আজ ৫৩তম বছর পেরিয়ে আবারও আমরা ৫শতাধিক প্রাণের বিনিময়ে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র- আন্দোলনের মাধ্যমে এ এক নতুন বাংলাদেশ পেলাম ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে গত তেপান্ন বছরে যারা সরকার প্রধান ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রপতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধান উপদেষ্টা আবার কেউ সামরিক শাসন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর এক মাসের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়, যা মুজিবনগর সরকার তথা প্রবাসী সরকার নামে পরিচিত। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি হিসেবেই শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরেন ১০ই জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে। তিনি সংসদীয় পদ্ধতির সরকার করে রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আবার ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পুন:প্রবর্তন করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে সপরিবারে নিহতের আগ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  বাজে চাহিদা (প্রথম পর্ব)-ড.মীজানুর রহমান

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৫ আগস্টেই দেশের শাসনভার নেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ। সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় খন্দকার মোশতাক ৭৫ এর ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ৩ নভেম্বর ও ৬ নভেম্বরের ক্যু এর প্রেক্ষাপটে বিচারপতি আবু সাদত মোহম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। এর বছরখানেকের মাথায় জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে সরাসরি দেশ পরিচালনা শুরু করেন। প্রধান সামরিক প্রশাসক হওয়ার পর রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন জিয়া। পরে ‘নির্বাচিত’ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল দায়িত্ব নেন জিয়া। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন নিজের রাজনৈতিক দল বিএনপি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

জিয়াউর রহমান নিহতের পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত তিনি দায়িত্বে থাকলেও নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরপর ২৪ মার্চ সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। তিনি ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। এইচএম এরশাদ সেনাপ্রধানের পদ ছেড়ে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এরশাদ জাতীয় পার্টি গঠন করেন। ওই বছর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। গণআন্দোলনে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পতনের আগ পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন।

এরশাদের পতনের পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। তবে এরইমধ্যে ১৯৯১ সালের ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদপূর্তির কিছুদিন আগে ক্ষমতায় থেকে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচন করেন। প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে জিতে খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তবে আন্দোলনের মুখে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের হাতে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেন খালেদা জিয়া। বিচারপতি হাবিবুর রহমান সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একই বছরের ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

আরও পড়ুনঃ  যে বৈষম্যের কথা কেউ বলে না: শায়খ আহমাদুল্লাহ

সরকারের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ১৫ জুলাই ক্ষমতা তুলে দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের হাতে। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হলে ওই বছরের ১০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান। খালেদা জিয়া টানা পাঁচ বছর দেশ শাসন করে ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তবে ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ফখরুদ্দীন আহমেদ প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকেন। নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগ জয়ী হলে ওই বছর ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা (বাংলা ট্রিবিউন)। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী এবং ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলেও এর পরের নির্বাচনগুলো শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই হয়েছে। বাস্তবিক অর্থে ২০০৮ সালের পর বাংলাদেশে আর কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। এই সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুইটি হয়েছে অনেকটা একতরফা নির্বাচন। এসব নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়াসহ কারচুপির ব্যাপক অভিযোগ ছিলো (বিবিসি)।

৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পলায়ন করেন দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এই আন্দোলনটি শুরুতে ছাত্রদের কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত এটা শুধু কোটা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। একপর্যায়ে দেশের সব স্তরের মানুষ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে বা সমর্থন দিয়েছে। এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অনেকেই মনে করেন, একতরফা বা জালিয়াতির নির্বাচন, বিরোধীদের ও বিরুদ্ধমত দমন, মানুষের বাক-স্বাধীনতা হরণ, ন্যায় বিচার বঞ্চিত হওয়া, অনিয়ম -দুর্নীতি, জনসাধারণের মতামত উপেক্ষা করে আমলা আর প্রশাসনের ওপর অধিক নির্ভরশীলতাই ছিলো দলটির পতনের মূল কারণ। বিগত সময়েও যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারাও জনমতকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কেউই প্রতিবাদী বাঙালিকে পরাস্ত করতে পারেননি। ভবিষ্যতেও কেউ পারবে না এটিই আমরা বিশ্বাস করি।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় প্রকৃতি ও আমার বিচিত্র জীবন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিপেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ২০২৪ সালের ৮ আগষ্ট শপথগ্রহণের মাধ্যমে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। নতুন এই সরকারে ১৭ জন উপদেষ্টা রয়েছেন, যাদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়কও রয়েছেন। যেহেতু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সৃষ্টগর্ভ থেকে এই সরকার গঠিত হয়েছে। তাই এই সরকারের প্রতি মানুষের আশা এবং প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সাধারণ মানুষ চায়, তারা যতদিন প্রয়োজন ক্ষমতায় থেকে দেশের প্রতিটি সেক্টর হতে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং বৈষম্য দূর করুক। তাঁদের মাধ্যমে দেশে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা তৈরি হোক যাতে পরবর্তীতে কেউ ক্ষমতায় এসে পূর্বের ন্যায় আবারও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বিচারে লুটতরাজ, খুন-গুম দুর্নীতি ইত্যাদি করতে না পারে। ইনকিলাব জিন্দাবাদ

সর্বশেষ - ক্যাম্পাস

নির্বাচিত সংবাদ