প্রেমিক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও অন্যত্র বিয়ে করায় নিজের পরিহিত ওড়না পেঁচিয়ে ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের দশম শ্রেণী পড়ুয়া মাদ্রাসা ছাত্রী। এ ঘটনার পর শোকের ছায়ায় আকাশের চারিদিকে ভারী হয়ে আসছে। কান্না থামছে না পরিবার-আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর মাঝে।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক-শিমুলবাড়ী এলাকার মৃত আফাজ উদ্দিনের মেয়ে শিমুলবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মমতা মিতু (১৬) সাথে একই এলাকার ভ্যান্ডার মকু মিয়ার ছেলে অনার্স পড়ুয়া রাজু মিয়ার (২৩) সাথে প্রায় এক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
দুজনেই দুজনকে ভালবাসেন। রাজু ভাল বেসে তার প্রেমিকা মিতুকে একটি দামী স্মার্ট ফোনও উপহার দেন। এ অবস্থায় গত ৩০ জুলাই মেয়ের বাড়িতে এসে দুজনকে এক ঘরে পেয়ে পরিবারের লোকজন আটক করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়।
সেখানে রাজুর পরিবার কিশোরীর সাথে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলে মিতুর পরিবার ধর্ষণের মামলা না দিলে পুলিশ সন্দেহজনক আটক মামলা করে পুলিশ। তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। জামিনে বেরিয়ে এসে বিয়ে করার কথা থাকলেও গত শনিবার গোপনে অন্যত্র বিয়ে করে রাজু। রোববার বিয়ের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়ণসহ গান বাজিয়ে আনন্দ চলছিল। সেটা শুনতে পেয়ে রোববার বিকেলে ঘরের ভিতর গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে ওই কিশোরী।
মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে লেখা,আমি মমতা মিতু ,আমি রাজুকে খুব ভাল বাসি,রাজুর জন্য আত্মহত্যা করলাম। কারণ আমি ও রাজু দুজন্যেই দুজনকে খুব ভাল বাসতাম। কিন্তু রাজুর মা-বাবা আমাদের সর্ম্পকটা মানতে চান না। তাই রাজুর বিয়ে দিয়েছে। আজ ওর বৌ-ভাত,আমি এটা মানতে পারছিনা। তাই আমি এই পৃথিবী ছাড়লাম। কিন্তু এই শাস্তি আমি একাই ভোগ করছি না। আমি চাই আমাদের এই সর্ম্পকটার মাঝে যারা বাঁধা ছিল,তারা আইনি শাস্তি পায়। ইতি মিতু—।
খালা রুজিনা আক্তার ও মামা মমিনুল ইসলাম জানান, রাজুর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক এলাকার সবাই জানে। এমনকি থানা পুলিশও জানেন। রাজুর গত ৩০ জুলাই আমার ভাগনির সাথে দেখা করতে আসে এবং এক ঘরে ছিল। সে সময় তাকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ এসে রাজুকে থানায় নিয়ে যান। বিয়ের প্রতিশ্রুুতি দিলে আমরা ধর্ষন মামলা না দিয়ে পুলিশ সন্দেহজনক মামলা দেওয়া হয়। জামিনে এসে মিতুকে বিয়ে না করেই গতকাল গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেছে প্রতারক রাজু। রাজুর বিয়ের কথা শুনে আজ আমার ভাগিনী আত্মহত্যা করেছে। আমরা ভন্ড ও প্রতারক রাজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় রজব আলী কুলু ও আশরাফুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মেয়েটির বাবা নেই। এই এতিম মেয়েটার সঙ্গে ভন্ড ও প্রতারক রাজু অবিচার করেছে। মেয়েটার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে। এই অসহায় মেয়েটিকে বিয়ে না করে গোপনে অন্য মেয়ে বিয়ে করার আজ মেয়েটা ক্ষোভে দুঃখকে আত্মহত্যা করেছে। আমরা ভন্ড ও প্রতারক রাজুর শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় মিলন ও রাজ জানান ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রাজু ও তার পরিবার পলাতক রয়েছে। আমরা তার দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে প্রেমিক রাজু মিয়ার ফোন নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী থানার ওসি (তদন্ত) সারওয়ার পারভেজ বলেন, সন্ধায় ঘটনাস্থলে গিয়ে কিশোরীর মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগের প্রক্রিয়া চলছে। যে চিরকুট পাওয়া গেছে সেটা এক্সপার্ট দিয়ে পরীক্ষা করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। এটা তারই লেখা কিনা।
#সময়ের কণ্ঠস্বর