দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেইজিং জাতের হাঁস পালন। আমাদের দেশের আবহাওয়া চীনের বেইজিং জাতের হাঁস পালনের উপযোগী হওয়ায় এবং লাভ জনক হওয়ার এ হাঁস পালনে আগ্রহ বেড়েছে ।অনেকের ধারণা ছিল আমাদের দেশে বিদেশী জাতের হাঁস লালন পালন করা যাবে কি-না অথবা আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কি-না, এমন নানা প্রশ্ন ছিল খামারিদের। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পেকিন জাতের হাঁসের বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে ব্যতিক্রমী চিত্র।
জানা যায়, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অর্থায়নে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভলপমেন্ট সোসাইটি) এর মাধ্যমে শরীয়তপুর সদর, জাজিরা এবং নড়িয়া উপজেলার বিগত চার বছরে ১০০ জন খামারিকে এই জাতের হাঁস পালনে উদ্ধুদ্ধ করতে হাঁসের বাচ্চা ও খাবার কিনে দেয়া হয়। এসডিএস কর্মকতাদের পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে খামারিরা এই হাঁস পালন শুরু করেন এবং সফলতা পাচ্ছেন। লাভজনক হওয়ায় এ প্রজাতির হাঁস পালন দিন দিন বাড়ছে।
জাজিরা বিকেনগর গ্রামের উদ্যোক্তা নুপুর আক্তার নিজ গ্রামে বাড়ির পাশে পুকুরের পাড়ে বাণিজ্যিকভাবে বেইজিং জাতের হাঁস পালন শুরু করেছেন। পুকুরের ওপরে আংশিক জায়গায় বাঁশের মাচা বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে এ হাঁসের খামার। হাঁসগুলো পুকুরপাড়ে ও বাঁশের মাচার ওপর খাবার খায়। হাঁসের মল ও খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ পুকুরের পানিতে পড়ায় পুকুরে চাষকৃত মাছকে পৃথক খাবার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। পানিতে একই সাথে সাঁতরে বেড়ায় হাঁস ও মাছ। এভাবে হাঁসের পাশাপাশি ফ্রি মাছ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রথম দিকে অনেকে বিদ্রুপ করলেও এখন অনেকেই তার একাজের প্রশংসা করছেন।
নুপুর আক্তার জানান, অনেকের বাসায় এ রকম সাদা হাঁসের খামার দেখছিলাম। দেখে আমার খুব ইচ্ছে হয় আমিও হাঁস পালন করবো। জানতে পারি, এসডিএস থেকে এ জাতের হাঁস দেয়া হয়। পরে আমি এসডিএস’র রুবেল ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের ৫০টি হাঁস এবং খাদ্যের জন্য কিছু টাকা দেন। আমরা আরও ৭০টি হাঁস কিনে পালন করা শুরু করি। ৬০-৭০ দিনে এক একটি হাঁস ২-৩ কেজি সাইজের হয়। বাজারে এক একটি হাঁস ৬৫০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খাবার ,ওষুধ সব খরচ করার পরেও হাঁস প্রতি ২০০-২৫০ টাকা লাভ হয়। হাঁসের খামার আরও বড় করে করার ইচ্ছে আছে কিন্তু জায়গা স্বল্পতার জন্য করতে পারছি না।
তৈয়ব আলী নামে আর একজন খামারি জানান, এসডিএস’র কাছ থেকে প্রথমে একবার হাঁস নিয়েছি সেগুলো বিক্রি করে আবার নতুন করে ১১০ টি হাঁস তুলেছি। গ্রীষ্মকালে বাঁজারে একটু চাহিদা কম তবে শীতকালে হাঁসের প্রচুর চাহিদা থাকে দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে খাদ্যের দাম বাড়ায় আগের চেয়ে লাভ একটু কম হচ্ছে। খাদ্যের দাম যদি কমে তাহলে এ জাতের হাঁস পালন করে বেশ লাভবান হওয়া যাবে। এই হাঁস পালনে বেশি জায়গার দরকার হয় না। মাচা করে আবদ্ধ স্থানেও এ হাঁস পালন করা যায়।
এসডিএস’এর সমন্বিত কৃষি ইউনিটের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুবেল হোসাইন বলেন, পেকিন/বেইজিং জাতের হাঁস মূলত চায়নার। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে উপযোগি হওয়ায় এ অঞ্চলের প্রান্তিক খামারিদের আত্মস্বাবলম্বী এবং প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে পিকেএসএফ অর্থায়নে পেকিন হাঁসের বাচ্চা, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এই হাঁস পালনে পরিচর্যা পরামর্শ প্রদানসহ নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে। নিয়মিত টিকা দিলে
এ হাঁসের রোগ-বালাই কম হয় এবং মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাত্র ৬০-৭০ দিনে একটি হাঁস ২.৫ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়। ওষুধ, খাবার সব মিলে হাঁস প্রতি ৩৫০-৪০০ টাকা খরচ হয়। আর এক একটি হাঁস ৬৫০-৭০০টাকা বা তারও বেশি বিক্রি হয়। বড় আকারে এবং সঠিক পরিচর্যা করা গেলে এই হাঁস পালন করে ব্যাপক লাভবান হওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, এ জাতের হাঁস তিন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। আবদ্ধ, আংশিক আবদ্ধ ও খোলা পদ্ধতি। আবদ্ধ পদ্ধতির চেয়ে আংশিক আবদ্ধ বা খোলা পদ্ধতিতে এই হাঁস চাষ করলে খরচ কম লাগে এবং বেশি লাভবান হওয়া যায়।