গুণীজনদের সাথে সেমিনারে অংশগ্রহণ

প্রকাশ:

Share post:

আব্দুল মান্নান: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রবর্তিত “ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলোশিপ” প্রোগ্রামের আওতায় ৫ জুলাই ২০২২ ফেলো কর্তৃক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলো প্রফেসর ড.এম. আফজাল হোসেন। এতে মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো: সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম। এছাড়া এই সেমিনারে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও উদ্যোক্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি বরেণ্য কোন শিক্ষাবিদ বা গবেষক না হলেও এসকল বিশিষ্ট গুনীজনের মাঝে আমাকেও ডাকা হয়। এত এত গুণীজনের ভীড়ে আমি থাকতে পেরে আনন্দে আপ্লুত হয়েছি। আমার ২৭ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে লিখালিখি’র (সাংবাদিকতা) কারনে অনেক জ্ঞানী-গুনী সমাবেশ, সেমিনারে অংশ নেয়ার সুযোগ হলেও কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এমন আমন্ত্রণ পত্র পাইনি। সেদিক থেকে এ সেমিনারের আমন্ত্রণ পত্র এবং কল পাওয়া ছিলো আমার জন্য একটি বিশেষ বার্তা এবং সেই সাথে অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের। তাছাড়া যে বিষয়টি নিয়ে এই সেমিনারটি করা হয়েছে তা বর্তমান বিশ্বের কাছে ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আগামী বিশ্ব কোনদিকে যাবে তা অনেকাংশে নির্ভর করছে সমুদ্র নির্ভর সম্পদের উপর। আর এ বিষয়টিকে বলা হচ্ছে সুনীল অর্থনীতি। এ বিষয়টির উপরে গবেষণা প্রস্তাবনার জন্য ইউজিসি কর্তৃক প্রথমবার প্রবর্তিত ইউজিসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফেলো নির্বাচিত হন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. আফজাল হোসেন।

সুনীল অর্থনীতি কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? সুনীল অর্থনীতি বা Blue Economy হচ্ছে অর্থনীতির এমন একটি বিষয় যেখানে একটি দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এক কথায় সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু-ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। অর্থাৎ, সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যে কোন সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তাই ব্লু -ইকোনমির বা সুনীল অর্থনীতির পর্যায়ে পড়বে।

আরও পড়ুন:  সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বেরোবি ছাত্রলীগ নেতা পার্থর অভিনব প্রতিবাদ

সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। সমুদ্র, মাছ এবং মত্স্য সম্পদের মাধ্যমে খাবার চাহিদা মেটায়, মানুষ এবং পন্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়াও সমুদ্র নানা ধরনের প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ যেমন বালি, লবণ, কবাল্ট, গ্রাভেল, এবং কপার ইত্যাদির আধার হিসেবে ব্যবহূত হয় এবং তেল ও গ্যাস আহরণ ক্ষেত্র হিসেবে সমুদ্র প্রয়োজন হয়। এসব উপাদান সমষ্টিকেই বলা হয় সুনীল অর্থনীতি (Blue Economy)| সুনীল অর্থনীতির এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজির সৃষ্টি করা, আয় বাড়ানো এবং সর্বোপরি পরিবেশে সঞ্চয়-বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্লু-ইকোনমির ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় জিডিপিতে ব্লু-ইকোনমির অবদান প্রায় ৪৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। ওই দেশের সরকার আশা করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপিতে ব্লু-ইকোনমির অবদান বেড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে। এছাড়া চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আয়ারল্যান্ড, মরিশাস ও যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপিতেও ব্লু-ইকোনমির ব্যাপক অবদান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের জিডিপিতেও ব্লু-ইকোনমির অবদান বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সমগ্র বিশ্বে জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিষয়টিও অগ্রাধিকারযোগ্য। খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতিরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। অনেক সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও প্রাণীতে বিভিন্ন ধরনের দুর্লভ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। দৃশ্যমান জলাভূমি ও স্থলসীমায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক সম্পদের মাধ্যমে ওই পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব। সেদিক থেকে দেখা যাচ্ছে, সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও প্রাণী বিশ্বের প্রায় ৪৩০ কোটি মানুষের জন্য প্রায় ১৫ শতাংশ প্রোটিন জোগান দিয়ে যাচ্ছে।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সিংহভাগ সমুদ্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। ব্লু-ইকোনমির ওপর ভিত্তি করে সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, জাহাজ চলাচল, জৈবপ্রযুক্তি, খনিজ পদার্থ উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক পণ্য উৎপাদন কারখানা, পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্র ক্রমেই বেড়ে চলছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামুদ্রিক সম্পদের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণেরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমুদ্রে বিদ্যমান সামুদ্রিক সম্পদের ওপর গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্র বিজয়ের পর ইতোমধ্যে বাংলাদেশও সামুদ্রিক সম্পদের ওপর গবেষণা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আরও পড়ুন:  ডিজিটাল অনলাইন নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ফেসবুক ও ইউএন উইমেন

আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ১৯৭৩ সালে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগানোর স্বপ্ন দেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় চট্টগ্রামস্থ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম মেরিটাইম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘মেরিন ফিশারিজ একাডেমি’। কালক্রমে আজ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপ্তি স্ব-গৌরবে সমগ্র বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করেছে। ২০১২ ও ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় এবং এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আয়তন প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমান হওয়ায় এই সমুদ্রবিজয়ের পর খুলে গেছে নীল বিপ্লবের অপার দুয়ার। সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ এ সমুদ্র অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় নীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পাঁচ ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সামুদ্রিক সম্পদের বহুমাত্রিক জরিপ দ্রুত সম্পন্ন করা। এর মাধ্যমে সরকার সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর জন্য প্রথম ও প্রধান কাজটিই হাতে নিয়েছে। সুতরাং বলা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির নতুন এক দিক উম্মোচিত হতে যাচ্ছে।

spot_img

সংবাদ সারাদেশ

বিজিবির হাতে প্রেমিকের সহযোগীসহ ভারতীয় গৃহবধূ আটক

ফুলবাড়ী ( কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন এক ভারতীয় গৃহবধু। উদ্দেশ্য...

যে মতাদর্শেরই হোক,চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে: সারজিস

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম  বলেছেন যে মতাদর্শেরই হোক...

যারা দেশের মাটিকে আমানত মনে করে নির্বাচন তাদের জন্য: ডা. শফিকুর

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন,নির্বাচন তাদের জন্য, যারা দেশের মাটিকে আমানত মনে করে। আমরা চাই অতিদ্রুত...

খেলার মাঠ উম্মুক্ত করার দাবিতে ঢাকায় নাগরিক সমাবেশ ও লংমার্চ

আনোয়ারা উদ্যান, পান্থকুঞ্জ পার্ক, তাজউদ্দীন আহমদ পার্ক ও ওসমানী উদ্যান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার” দাবিতে এক নাগরিক সমাবেশ...

Discover more from The bartabulletin.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading