আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বাধীন বাহিনী প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়েছে। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, পাকিস্তানের বিমান হামলার কয়েকদিন পর শনিবার পাল্টা হামলা চালানো হয়। তবে হামলার ফলে উভয়পক্ষের হতাহত বা ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সীমান্তে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তানের অন্তত ১৯ সেনা এবং তিন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, একই সংঘর্ষে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন সৈন্য নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ এবং আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের সীমান্ত এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, উভয় পক্ষ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে।
এদিকে, গত ২৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলা চালায়, যেখানে ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে আফগান তালেবান তাদের আক্রমণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, এবং এর পরেই শনিবার পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের একাধিক স্থানে হামলা চালানো হয়।
সীমান্তের নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানায়, পাকিস্তানের কুররম এলাকায় অন্তত দু’টি স্থানে সংঘর্ষ হয়, এতে পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার কর্পসের (এফসি) এক সৈন্য নিহত এবং সাতজন আহত হন। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটে জানিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের সীমান্তের ওপারে যে পয়েন্টগুলো থেকে আফগানিস্তানে হামলা হয়েছিল, সেগুলো প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তু ছিল।’’
আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘‘এ সংঘর্ষের কারণে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। তবে আফগান বাহিনীর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’’
২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। পাকিস্তান অভিযোগ করে যে, আফগানিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে, যদিও তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে ২০২৩ সালের মার্চে, যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে দুটি বিমান হামলা চালায়, যাতে পাঁচ নারী ও শিশু নিহত হন।
তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তে জঙ্গি সহিংসতা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তান এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে সংগ্রাম করছে, এবং চলতি বছরেই বিভিন্ন সংঘর্ষে পাকিস্তানের ৩৮৩ সেনা নিহত হয়েছেন। একই সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অন্তত ৯২৫ জঙ্গিকে হত্যা করার দাবি করেছে।