আব্দুল মান্নান।। কৃষিখাতে জীবপ্রযুক্তি গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য কৃষি ক্যাটাগরিতে ‘লিও ফাইবার’ প্রেজেন্টস “এটিএন বাংলা-উন্নয়নে বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড”-২০২১ পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,গাজীপুর এর ইনস্টিটিউট অভ বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এর ৮ নম্বর ফ্লোরে এটিএন বাংলা ‘উন্নয়নে বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড’-২০২১ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম কে এটিএন বাংলা ‘উন্নয়নে বাংলাদেশ-২০২১ সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়। কৃষি ছাড়াও ২০২১ সালে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি, যোগাযোগ, তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ অবদানের জন্য এটিএন বাংলার পক্ষ থেকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে আরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, বাসসের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, হেদায়েতুল আজিজ মুন্না প্রমুখ।
উক্ত গুণীজন স্বংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এটিএন নিউজ ও এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে দেশ – বিদেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সার্বিক বিষয়ে অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এটিএন বাংলা উন্নয়নে বাংলাদেশ এওয়ার্ড-২০২১ প্রদান করায় এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার এ কৃতিত্ব শুধু আমার একার নয়, এ কৃতিত্ব আমার সকল ছাত্রছাত্রী, পোস্টডক, দেশে-বিদেশের সকল কোলাবোরেটর এবং আমার গবেষণায় অনুদান প্রদানকারী সংস্থার । দেশের উন্নয়নে নিবেদিত গুণীজনের সাথে এ অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি আমার গবেষণাদলকে আরও বেশী ভাল কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। খুব খুশী হয়েছি ড্রিম ফর ডিজএবিলিটির প্রতিষ্ঠাতা স্নেহের হেদায়েতুল আজিজ মুন্না দেশের প্রতিবন্ধী জনগণকে উন্নয়নের মূল স্রোতে আনয়নের স্বীকৃতি হিসেবে এ এওয়ার্ড পেয়েছেন। মুন্নার প্রচেষ্টা এবং সাফল্য অনন্য ।
তিনি আরও বলেন, যেকোন পুরস্কার প্রাপ্তিই অত্যন্ত আনন্দের ও সম্মানের। পুরস্কার ব্যক্তি জীবনে কাজে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি সব সময় নিজের মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করি। দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে আমি ভালোলাগা ও ভালোবাসা খুঁজে পাই। আমি এবং আমার টিম দেশের সমস্যাভিত্তিক গবেষণা এবং অগ্রসরমান নতুন জীবপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজটি খুব উপভোগ করি। সেজন্য করোনা মহামারীকালে একদিনের জন্যও আমাদের ল্যাব এবং মাঠ গবেষণা বন্ধ থাকেনি। গত বছর আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে ৫০টির অধিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি।
তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গমের ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এতে শত কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয় কৃষকদেরকে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েন তারা। সে সময় আমি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের ঐক্যবদ্ধ করে প্রথম গমের ব্লাস্ট রোগ সনাক্ত ও জীবন রহস্য উম্মোচন করি। এরপর খুব দ্রুত সময়ে অল্প খরচে গমের ব্লাস্ট রোগের জীবাণু সনাক্ত করার পদ্ধতি আবিস্কারের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করি। যা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়। জীবনরহস্য বিশ্লেষণপূর্বক গমে মহামারী সৃষ্টিকারী রোগটিকে সঠিকভাবে সনাক্ত করার ফলে কৃষকদেরকে রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে পরবর্তী বছরগুলিতে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম জীবপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী গবেষণায় অসাধারন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন। তন্মধ্যে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ট্রান্সফর্মার রোডশো প্রতিযোগিতা পুরস্কার ২০১৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুলব্রাইট ফেলোশিপ, এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৭ ভিজিটিং স্কলার ফেলোশিপ রোটারি ক্লাব অফ উত্তরা (আরআই জেলা ৩২৮১), বাংলাদেশ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক। হাফিজা খাতুন মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আব্দুল মান্নান স্মৃতি পুরস্কার ২০১৭। “জিনিয়াস অ্যাওয়ার্ড ২০১৭” বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সমিতি, বাংলাদেশ । কৃষিতে অসামান্য অবদানের জন্য সিএসআরএল (টেকসই জীবনধারণের জন্য প্রচার), অক্সফাম এবং জিআরডাব্লু থেকে খাদ্য ও কৃষি পুরস্কার ২০১১।কৃষি বিজ্ঞানে অসামান্য মৌলিক গবেষণা আবিষ্কারের জন্য দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অ্যাওয়ার্ড ২০০৮ (মে ২০১১ সালে প্রাপ্ত পুরস্কার)। জার্মানি আলেকজান্ডার ভন হুমবোল্ডট ফাউন্ডেশনের জর্জ ফোস্টার রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ (২০০৭-২০০৯)। কৃষি বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা সাফল্যের জন্য ঢাকা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে ইউজিসি গবেষণা অ্যাওয়ার্ড ২০০৪। বায়োসায়েন্স, বায়োটেকনোলজি, এবং অ্যাগ্রোকেমিস্ট্রি জাপান সোসাইটি (জেএসবিবিএ) উদ্ভিদ এবং ফাইটোপ্যাথোজেনিক পেরোনোস্পোরোমাইসেটের মধ্যে ইকোকেমিক্যাল মিথস্ক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য গবেষণা আবিষ্কারের জন্য সেরা ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড ২০০৩। এম.এসসি এজিতে রেকর্ড নম্বরসহ বারৃবির কষি অনুষদে প্রথম স্থান অর্জনের জন্য বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং বিএইউর চ্যান্সেলর অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে স্বর্ণপদক ১৯৮৯, বি.এস.সি তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিএইউ চ্যান্সেলরের পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি ১৯৯২ সালে প্রফেসর করিম স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মেধাবী বৃত্তি প্রাপ্ত হন। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ একাডেমিক ফেলোশিপ , বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক এবং গবেষণা কাজে অসামান্য অবদানের জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশে তরুণ গবেষকদের অত্যাধুনিক জীবপ্রযুক্তি, জিনপ্রকৌশল, জিন এডিটিং এবং কৃষিতে ন্যানোটেকনোলজি গবেষণায় মেন্টর হিসেবে নিবেদিত। তাঁর গবেষণা জলবায়ুর ঘাত মোকাবিলার মাধ্যমে দেশে খাদ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে অনন্য অবদান রাখছে।
You must be logged in to post a comment.