অধিক মুনাফার লোভে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপাচ্ছে কারখানাগুলো

প্রকাশ:

Share post:

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য ১১৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বইয়ের মান নিয়ে যেহেতু আপস হবে না, এটা বুঝতে পেরে এবার ১১৬টি প্রেসই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিন্ডিকেট করে। প্রায় ৪০ ভাগ টেন্ডারে একজনের বেশি টেন্ডার জমা দেয়নি। এই সিন্ডিকেটের কারণে বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৬ থেকে ২০ শতাংশ। তার পরও অধিক মুনাফার লোভে রাতের আঁধারে নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপাচ্ছে কিছু ছাপাখানা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গত এক মাসে ছাপাখানাগুলো পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের কাগজে ছাপানো বই হাতেনাতে ধরেন। কোন ছাপাখানায় বইয়ের কাগজ নিম্নমানের। আবার কোনটির বইয়ের বাইন্ডিং ঠিক নেই। কিছু ছাপাখানায় কাগজের বাস্টিং ফ্যাক্টর কম, বইয়ের সামনের ও পেছনের মলাট খুলে যাচ্ছে। এমন সাত লক্ষাধিক নিম্নমানের পাঠ্যবই ও বইয়ের ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র ইত্তেফাককে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আমাদের সবার উচিত মানসম্মত বইয়ের জন্য আন্দোলন করা। পাঠ্যবই হচ্ছে শিক্ষার ভিত্তি, সেই ভিত্তি যেন দুর্বল না হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অধিকার আছে, এবং আমাদের এই সংকট থেকে দ্রুত বের হয়ে আসা প্রয়োজন। আসুন, আমরা এই উদ্যোগে সামিল হই এবং একসঙ্গে গুণগত মানের জন্য সোচ্চার হই।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য মানসম্মত বই দিতে কঠোর অবস্থানে সরকার। প্রেসে-প্রেসে কাগজ ও ছাপা হওয়া বই তদারকির জন্য সরকার তৃতীয় পক্ষের দুটি ইন্সপেকশন এজেন্সি নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া বরাবরের মতোই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের ছাপার কার্যক্রম সরেজমিন তদারকি করতে এবার নতুন করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের আরও ১৫০ জন শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা নিয়মিত সংযুক্ত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বাস্তবিক অবস্থা, কাগজ সরবরাহ, টেস্টিং রিপোর্ট, ছাপার মান, প্রতিদিনের কর্মপরিকল্পনা, বই ছাপার অগ্রগতি ও সরবরাহ প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাচ্ছেন। এ কারণে এবার নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৪০ কোটি ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪১টি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ চলমান। গতবারের চেয়ে এবার কাগজের পুরুত্ব ও উজ্জ্বলতা বাড়ানো হয়েছে। গত বছর কাগজের পুরুত্ব ছিল ৭০, আর উজ্জ্বলতা ছিল ৮০। এ বছর কাগজের পুরুত্ব ৮০ এবং উজ্জ্বলতা ৮৫ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বার্স্টিং ফ্যাক্টর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১৬।

আরও পড়ুন:  গভীর সংকটে দেশের তৈরি পোশাক খাত, লাখো মানুষ কর্মহীন

এদিকে সরকারের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর তড়িঘড়ি করে রবিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

এর আগে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া চিঠিতে সমিতির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ লেখেন, ২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এর আগে পাঠ্যবই ছাপা শেষ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী ৫০ শতাংশ বই জানুয়ারিতে সরবরাহের শর্ত রহিত করা এবং পুস্তক মুদ্রণের আগে আংশিক বিল পরিশোধেরও দাবি জানান তিনি। চিঠির বিষয়টি জানাজানি হলে চাপের মুখে পড়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পরিস্থিতি সামাল দিতে এনসিটিবি কর্মকর্তাদের পরামর্শে রাতে আবার শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর চিঠি লেখেন মুদ্রণ সমিতির এই নেতা। তাতে ‘বিভ্রান্তি ছড়ানোয়’ ও ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজ’ করায় জাতির কাছে ক্ষমা চান তিনি। এদিকে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান।

এতে সমর্থন জানিয়েছে মুদ্রণ মালিক সমিতি। রবিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই মুদ্রণ মালিক সমিতি পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে আমাদের জানিয়েছে। অপরদিকে জানুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের অন্য পাঁচটি বই এবং জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে মাধ্যমিকের বাকি সব বই পৌঁছে দেওয়ার কথা হয়েছে। এজন্য তারা সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছে—আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা মুদ্রণ মালিক সমিতির সমস্যাগুলো জেনে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই পরদিন উপদেষ্টা বললেন, আমি কাগজ ও কার্ডের সংকট সমাধান করে দিয়েছি। তাদের বলেন, তারা (মুদ্রণ মালিকেরা) কাজ শুরু করুক এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিক। তাদের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে আমি বলেছি শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে যা আলাপ-আলোচনা হয়েছে তুলে ধরুন। কিন্তু তারা সেই কাজটি রবিবার এসে করলেন, সেই কারণে কিছুটা বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

spot_img

সংবাদ সারাদেশ

ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ গ্রীন ভয়েসের ৭ দাবি

পরিবেশ সুরক্ষায় পুরনো যানবাহনের ব্যবহার বন্ধ করা ও কালো ধোঁয়া নির্গমন ঠেকাতে ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ ৭ দফা...

জানাক ও বৈষম্যবিরোধীর নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে আসছে নতুন একটি রাজনৈতিক দল। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ...

কুয়েট উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নিন্দা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের পাবলিক...

ইটভাটায় কাজে গিয়ে নিখোঁজ সন্তানকে ফিরে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

মাদারীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরে একটি ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কোলচুরি গ্রামের ১৯...

Discover more from bartabulletin.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading