চিকিৎসক সুরক্ষা আইন পাশসহ পাঁচ দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও।
আজ সোমবার একাডেমিক শাটডাউন এবং মঙ্গলবার হাইকোর্টের উদ্দেশে লংমার্চের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার সাধারণ মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে বিক্ষোভ করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, খুলনা মেডিক্যাল কলেজসহ দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।
কর্মবিরতির কারণে কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হয়। রোগীরা তাদের সেবা পেতে সমস্যায় পড়েন। এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়েন রোগীরা, গতকাল এই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
প্রসঙ্গত :দশম গ্রেডে শূন্য পদে নিয়োগ, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরিসহ চার দফা দাবিতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় বিক্ষোভ করেন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টস ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা। সরকারের আশ্বাসে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রয়েছে। এবার সারা দেশে তাদের পালটা কর্মসূচি দিলেন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—
১. এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না। বিএমডিসির নিবন্ধন কেবল এমবিবিএস/বিডিএস উত্তীর্ণদের দেওয়া, ম্যাটসদের নিবন্ধন বন্ধ করা এবং বিএমডিসির আইনের বিরুদ্ধে করা রিট মামলা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
২. চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। এমবিবিএস/বিডিএস ছাড়া আর কেউ ওটিসি তালিকার বাইরে ওষুধ লিখতে পারবে না।
৩. স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকসংকট নিরসনে দ্রুত ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদ পূরণ, চিকিত্সকদের বিসিএসে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৪ বছর করতে হবে।
৪. সব ধরনের মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) এবং মানহীন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ বন্ধ করে দিতে হবে। এরই মধ্যে পাশ করা ম্যাটস শিক্ষার্থীদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার পদবি বাতিল করে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. চিকিত্সক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, ‘এমবিবিএস এবং বিডিএস ছাড়া কেউ ডাক্তার লিখতে পারবেন না—এই আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা রিট করেছি। বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত ৯০ বার শুনানি হয়েছে, কিন্তু নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে, আমাদের দাবি, সেদিন বিষয়টি নিষ্পত্তি হোক। ম্যাটস থেকে উত্তীর্ণরা অনেক ক্ষেত্রেই অপচিকিত্সা দিচ্ছেন, এটা বন্ধ হোক।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায়ে সোমবার একাডেমিক শাটডাউন এবং মঙ্গলবার হাইকোর্টের উদ্দেশে লংমার্চ করব।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আরাফাত হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার ম্যাটসদের বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া শুরু করেছে; যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি ও আত্মঘাতী। আমরা ইন্টার্ন চিকিত্সকরা স্বাস্থ্য খাতের বিপ্লব সাধনের জন্য পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছি। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিত্সকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। অন্য চিকিত্সকদের দিয়ে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’