কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় পরিবার গুলো মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে। জীবন সংগ্রামে ঠিকতে না পেয়ে অন্যত্র চলে গেছে অনেক পরিবার। অতি কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে কয়েক বছর আবাসনে থাকলেও তাদের নিজস্ব ঠিকানা না থাকায় বর্তমানে ফুটো-ফাটা মরিচা ধরা টিনের চালে পলিথিন দিয়ে কোন রকমে দিন কাটাচ্ছেন তারা। ঘরের বেড়া ও উপরের টিনগুলো পচে গেছে।
২০১৭ সালের ভয়াভহ বন্যায় কয়েকটি ব্যারাক দুমড়ে মুচড়ে পড়ে যাওয়ায় পরেও খোঁজ রাখেনি কেউই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এভাবেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তরঘেষা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-গোরকমন্ডল এলাকার ভুমিহীন ও গৃহহীন ছিন্নমুল পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় একটি ইউনিয়নে ২০০৩-০৪ সালে গোরকমন্ডল এলাকায় ২টি আবাসনে ১টিকে ১৬০ পরিবার আরেক ১টিতে ৮০ পরিবারকে থাকতে দেয়া হয়।
মাত্র ৪/৫ বছর এ পরিবারগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেছেন। এরপর আস্তে আস্তে আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছ গ্রামের টিনসেটের ঘরগুলোর চাল ফুটো, বেড়াগুলো ধসে পড়াসহ ঘরগুলোর সামনের উঠানে আগাচায় পরিপূর্ন হয়ে যাওয়ায় একেবারে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। প্রায় প্রতিটি ঘরের চাল ও টিনের বেড়া বড় বড় ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টির দিনে পানি তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। ফলে সামন্য বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতর পানি পড়ে। কেউ কেউ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে টিনের ওপর পলিথিন দিয়েছেন। প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি টিউবওয়েল ও একটি টয়লেট নির্মান করা হলেও সংস্কারের অভাবে তা ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ পলিথিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে কাঁচা টয়লেট বানিয়ে তা ব্যবহার করছেন। শত কষ্টের পরেও ভুমিহীন পরিবার গুলো দিনের পর দিন নিরুপায় হয়ে দিন কাটাঁচ্ছেন। কোথাও ২২ বছর, ১৩ বছর পূর্বে নির্মিত ঘরগুলো সংস্কার না করায় টিনের ছাউনি বেড়া ফুটো হয়ে গেছে।
আবাসনে বাসিন্দা জান্নাতী বেগম (৫৫) জানান, আমাদের কথা কেউ শোনেন না। আমরা অনেক কষ্টে আছি। দিনাতিপাত করছি। কেই খোঁজ খবর রাখে না। বৃষ্টি হলেই ছেলে নিয়ে পলিথিন টিনের উপর দিয়ে কোন রকমে দিন কাটাচ্ছি। কারণ আমাদের তো অন্য কোথাও থাকার জায়গা নেই।
দক্ষিণ চর-গোরকমন্ডল আনন্দবাজার আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা বাবলুর স্ত্রী জরিনা জানান, আমি ৬নং ঘরে থাকি বটে। কিন্তু সরকারী ঘরে থাকতে পারছি না। কারণ বর্তমানে ঘরটি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই নিজে নতুন করে ঘর তৈরি করে এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কোন রকমে দিন কাটাচ্ছি। একই আবাসনের কামারের কাজ করেন দিন মজুর মৃত শমসেরের ছেলে বাদশা জানায়, আমাদের অবস্থা কাহিল। কেউ আমাদের খোঁজ খবর রাখে না। যেদিন আয় হয় সেদিন ভালোই চলি। আর কাজ না পেলে কষ্টে থাকি।
অন্যদিকে একই এলাকায় আবাসনের ২০টিটিনের চালার বিল্ডিং ঘর নির্মাণ করা হলেও ১৭ ঘরে বসবাসকারী চাদ মিয়ার স্ত্রী পেয়ারী খাতুন জানান, ২০ জনের নামে এই আবাসনের ঘর বরাদ্দ থাকলেও এখানে থাকে মাত্র ৮-৯ টি পরিবারের মানুষ। বাকিরা নিজ বাড়ীতে থাকেন।
গোরকমন্ডল আবাসনের সভাপতি মোন্নাফ হোসেন জানান, ১০ থেকে ১২ বছর ধরে আবাসনটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রশাসনের যোগযোগ করেছি। প্রতিশ্রুতি দিলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমানে আবাসনের থাকা ঘরগুলো অবস্থা খুবই করুন। চাল ফুটো হয়েছে। টয়লেটের ঘরগুলোর টিনও পঁচে গেছে। বাধ্য হয়ে বৃষ্টি ও শীত থেকে রক্ষা পেতে কোন রকমেই টিনের চালে পলিথিন ও বেড়া দিয়ে ঘিরে কাঁচা টয়লেট বানিয়ে তা ব্যবহার করছি। অসহনীয় কষ্টের কারণে আমাদের দু’টি আবাসনের ১৭৫ টি পরিবার অন্য জায়গায় ঠাঁই নিয়েছে। আমাদের জায়গা জমি নেই তাই এখানে আছি।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, আবাসন ও গুচ্ছ গ্রামগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে বসবাসরত প্রত্যেকটি পরিবারকে ঘর নির্মান করে দেওয়া হবে।