আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)-এর ২৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস । যদিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২৬ বছর খুব দীর্ঘকাল নয়, দেশে বশেমুরকৃবি ইতোমধ্যে একটি অনন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এ স্বল্প সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষিতে নতুন জ্ঞান-সৃজন, সৃজিত জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত আগামী দিনের নেতৃত্ব তৈরি এবং সর্বোপরি গবেষণালব্ধ নতুন জ্ঞানের প্রয়োগে কৃষিকে ‘স্মার্ট কৃষি’ তে রূপান্তরে দেশে এক অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছে। টাইমস হায়ার এডুকেশন রেঙ্কিং সিস্টেমে বশেমুরকৃবি এ বছর দেশের শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয়। দুই হাজারের কম ছাত্রছাত্রীর একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান অর্জন করেছে, এটি নিশ্চয়ই অনেকের নিকট একটি কৌতূহলী প্রশ্ন! এমতাবস্থায়, বশেমুরকৃবির জন্মদিনে দেশের উচ্চ শিক্ষায় বশেমুরকৃবির ঈর্ষনীয় অর্জন এবং এটিকে বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করাই এ প্রবন্ধের অবতারণা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টি এ বছর ২6 বছর বয়স অতিক্রম করছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার অধ্যাপনা এবং রোমাঞ্চকর গবেষণার অভিজ্ঞতা ১৪ বছরের কিছুটা বেশি মাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বশেমুরকৃবি’র যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর। এটি পূর্বতন ইন্সটিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (ইপসা)-এর উন্নতিকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ-জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ত্রিপক্ষীয় আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় ১৯৯১ সাল থেকে দেশে উচ্চতর কৃষি শিক্ষায় স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ইপসা এদেশে সর্বপ্রথম ট্রাইমিস্টার (সামার, অটাম এবং উইন্টার টার্ম) নর্থ-আমেরিকান কোর্স ক্রেডিট শিক্ষাদান পদ্ধতি’র প্রবর্তন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রীর পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকে চার বছর মেয়াদী বিএস (কৃষি), ২০০৯ সাল থেকে বিএস (ফিশারিজ) এবং ২০১০ সাল থেকে ৫ বছর মেয়াদি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন, ২০১২ সাল থেকে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীন উন্নয়ন এবং ২০২২ সাল থেকে বিএস (ফরেস্ট্রি) ডিগ্রীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সাল থেকে ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) চালু করে জীবপ্রযূক্তি ও জিন প্রকৌশল বিষয়ে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রি এবং পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনিং প্রদান করা হচ্ছে । আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দূর্যোগ মোকাবেলায় কৃষককে আগাম ও সঠিক তথ্য প্রদান বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরীর লক্ষ্যে এগ্রোমেটেরিওলজী বিভাগ চালু করা হয়েছে। জলবায়ু বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা জোড়দার করার জন্য ইনস্টিটিউট অব ক্লাইমেন্ট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্ট নামে পৃথক একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য ও উৎপাদিত খাদ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়ন ও বহুমুখী ব্যবহারসহ যুগোপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ইনস্টিটিউট অব ফুড সেফটি এন্ড প্রসেসিং নামে আরও একটি নতুন ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। সম্প্রতি ফেকাল্টি অব এগ্রিকালচারাল এন্ড বায়োরিসোর্সেস ইন্জিনিয়ারিং-এ বিএস প্রোগ্রামে প্রথমবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে বশেমুরকৃবির শিক্ষা প্রোগ্রাম যুগোপযোগী ও বৈচিত্রময় এবং গবেষণা প্রয়োজনভিত্তিক ও অগ্রসরমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি বশেমুরকৃবিতে বহিরাঙ্গন কার্যক্রম একটি অন্যতম কর্মকান্ড, যা ডঃ কাজী এম বদরুদ্দোজা বহিরাঙ্গন কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হয়। ল্যাবরেটরি ও মাঠ-ভিত্তিক গবেষণার পাশাপাশি বহিরাঙ্গন কার্যক্রম কৃষক ও গবেষকদের মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত গবেষণালব্ধ ফলাফল কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে গবেষণা কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে অবহিত করানো হয়। বহিরাঙ্গন কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের সাথে সরাসরি কাজ করার জন্য গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার টোকনগরি এবং সদর উপজেলার কাউলতিয়ায় দুটি ‘প্রযুক্তি ভিলেজ’ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভেটেরিনারী টিচিং হাসপাতালের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষী ও খামারীদের হাস-মুরগী ও গবাদিপশুর নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে পশুপাখি উত্পাদনে প্রভাব ফেলছে তা নিরুপণ এবং টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য বশেমুরকৃবিতে আধুনিক গবেষণা স্থাপনা এবং সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
গত ২৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি সত্যিকারভাবেই ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং ক্রমশ একটি গবেষণা-ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। বশেমুরকৃবিতে বিশেষ করে গ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রী , পোস্টডক্টরাল ফেলো এবং তরুণ শিক্ষকদের গবেষণায় মনোযোগ খুবই লক্ষণীয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ বছরই প্রথম টাইমস হায়ার এডুকেশন রেঙ্কিংয়ে দেশে শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা অর্জন করেছে। ইতিপূর্বে স্পেন-ভিত্তিক সিমাগো এবং উরি (WURI) রেংকিং-এ পরপর দু’বার দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছিল। টাইমস হায়ার এডুকেশন, উরি এবং সিমাগো রেংকিং-এ স্কুপাস ইনডেক্সিং জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের সংখ্যা আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিশ্বজ্ঞান ভান্ডারে-ইম্প্যাক্টফুল গবেষণা প্রবন্ধ সংখ্যাকে বিবেচনা করা হয়। গত পাঁচ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ সহস্রাধিক প্রবন্ধ স্কুপাস ইনডেক্সিং জার্নালে প্রকাশ করেছে, এবং প্রতি বছরেই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুপাস ডাটাবেজ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী ৫ বা তদূর্ধ্ব ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরবিশিষ্ট বিশ্বখ্যাত জার্নালে প্রায় তিন শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। উল্লিখিত তিন শতাধিক উচ্চমানের প্রকাশনার প্রায় এক তৃতীয়াংশ প্রকাশিত করেছে ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই)’র ছাত্রছাত্রী, পোস্টডক্টরাল ফেলো এবং শিক্ষকগণ। এ ইনস্টিটিউটটি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চালিকা শক্তি, ন্যানোটেকনোলজি, জিনোমিক্স, বায়োইনফরমেটিক্স, ক্রিসপার-কাস জিনোম এডিটিং, মেশিন লার্নিং এবং বায়োটেকনোলজিসহ অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি দ্বারা দেশের চাহিদাভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করে থাকে।
বশেমুরকৃবির আইবিজিই দেশে গমের প্রথম মহামারী ব্লাস্ট রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাকের জীবনরহস্য বিশ্লেষণ করে রোগটির কৌলিক বৈশিষ্ট এবং উৎপত্তিস্থল নিরুপণে বিশ্বব্যাপী গবেষকদের সম্পৃক্ত করে গবেষকদলের নেতৃত্ব দেন। জীবাণুটির চরিত্র উদঘাটন ও উৎপত্তিস্থল আবিস্কারের ফলে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হয়, যা পরবর্তী বছরগুলিতে গমে ব্লাস্ট রোগ মহামারী হওয়া প্রতিরোধ করে। আইবিজিই-এর বিজ্ঞানীরা ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবনের জন্য ক্রিসপার-কাস জিনোম সম্পাদনা প্রযুক্তি এবং আধুনিক জিন প্রযুক্তি ব্যবহারে গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত উন্নয়নের দ্বার প্রান্তে। তারা জিনোম-নির্দিষ্ট প্রাইমার এবং ক্রিসপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে গমের ব্লাস্ট ছত্রাক নির্ণয়ের জন্য একটি দ্রুত (মাত্র ৩০ মিনিটে) এবং পয়েন্ট-অব-কেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এ অত্যাধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি সারা বিশ্বে উদ্ভিদ কোয়ারান্টাইন অফিস এবং কৃষকের মাঠে প্রয়োগের জন্য বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং ব্রিটিশ এফসিডিও-এর অর্থায়নে একটি প্রকল্প চলমান আছে। দ্রুত গমের ব্লাস্ট রোগ সনাক্তকরণের এ প্রক্রিয়াটি প্রথম বাংলাদেশে আবিষ্কৃত কোন কৃষি প্রযুক্তির বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ।
এছাড়া আইবিজিই প্রথমবারের মতো দিনের-আলো চালিত রিচার্জেবল একটি ন্যানো-ছত্রাকনাশক উদ্ভাবন করেছে, যা ধ্বংসাত্মক গমের ব্লাস্ট রোগ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । তারা প্রোবায়োটিক সার আবিষ্কার করেছে, যা ধান এবং অন্যান্য ফসলে ৫০% রাসায়নিক সারের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করে এবং মৃত্তিকার স্বাস্থের উন্নয়ন করে।
আইবিজিইর বিজ্ঞানীরা জাতীয় মাছ ইলিশের অন্ত্রে প্রোবায়োটিক অণুজীবের রহস্য উদঘাটন করেছে, যা মাছটির অনন্য রোগ প্রতিরোধীতার সাথে সম্পর্কিত। এসব অণুজীব মৎস্য চাষে রোগ নিয়ন্ত্রণে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে কিভাবে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা চলছে। প্রতি বছর আইবিজিই থেকে বিশ্বের নামকরা জার্নাল এবং পুস্তকে প্রায় ৫০টির বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে, যা উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনীয়। বশেমুরকৃবি’র টাইমস হাইয়ার এডুকেশন রেঙ্কিং, উরি (WURI) এবং সিমাগো রেংকিং-এ প্রথম হওয়ার ক্ষেত্রে আইবিজিই’র উচ্চ ইম্প্যাক্টবিশিষ্ট প্রকাশনা এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। উল্লেখ্য যে, আইবিজিইতে জেনেটিক্স মলিকুলার বায়োলজি এবং জীবপ্রযুক্তি গবেষণায় দেশের শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানী রয়েছে, যিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিখ্যাত এলসেভিয়ারের রেংকিং-এ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ২% বিজ্ঞানীর একজন। প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই আইবিজিই বিশ্বব্যাপী গবেষণা উৎকর্ষতায় সুপরিচিত লাভ করছে। এ প্রতিষ্ঠানটির সাথে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, চীন, ভারত, সিংগাপুর, ব্রাজিল, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা যৌথ প্রকল্পে কাজ করছে। আইবিজিই থেকে ইতোমধ্যে শতাধিক পোস্টডক, পিএইচডি, মাস্টার্স ও স্নাতক পর্যায়ের গবেষক তাদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে দেশে এবং বিশ্বের নানা প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে গবেষণা করে চলেছে। বর্তমানে ৫০ জন গ্র্যাজুয়েট ছাত্রছাত্রী এবং পোস্টডক্টরাল গবেষক নিরলসভাবে কাজ করছে।
কৃষির নানা বিষয়ে বশেমুরকৃবি মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার সমন্বয়ে এ পর্যন্ত ধানসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল, সবজি ও তেলজাতীয় ফসলের ৬৭টি উচ্চফলনশীল জাত ও ১৪টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চালুকৃত এপিএ-তেও বশেমুরকৃবি পেয়েছে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা। মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বোৎকৃষ্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক আন্তর্জাতিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পুরস্কার অর্জন করে। ২০১৫ সালে বৃক্ষরোপণ ও কৃষি বনায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৪ অর্জন। ২০১৭ সালে শিক্ষা, গবেষণা ও বহিরাঙ্গন কার্যক্রমে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪২২ (স্বর্ণ) অর্জন। ব্যক্তিগত গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক বাংলাদেশ ও বিশ্ববিজ্ঞান একাডেমির স্বর্ণপদক, ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পদক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো, বিশ্ববিজ্ঞান একাডেমির ফেলো, আমেরিকান ফাইটোপ্যাথলজিকাল সোসাইটির ফেলো, ইউজিসি প্রফেসর ইত্যাদি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার প্রতিবেশ এবং পরিবেশ এদেশে সত্যিই অনন্য। শ্রেণীকক্ষে পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রদান এবং গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন সকল ক্ষেত্রেই পূর্ব-নির্ধারিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চলে। শিক্ষক কিংবা ছাত্রছাত্রী সকলেই একাডেমিক ক্যালেন্ডার কঠোরভাবে মেনে চলেন। তৎকালীন ইপসা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত সর্বমোট 5264 জন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে, তন্মধ্যে ২৪৫৮ জন বিএস, ২৪৬৩ জন এমএস এবং ৩৪৪ জন পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেছে। মোট ১১৩জন ছাত্রছাত্রীকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন রুরাল ডেভেলপমেন্ট সনদ প্রদান করেছে।
বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩৪ টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটে মোট ২৪ জন পিএইচডি ও ৬২৯ জন এমএস ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। স্নাতক পর্যায়ে বিএস (কৃষি), বিএস (ফিশারিজ), ডিভিএম ও বিএস (কৃষি অর্থনীতি) প্রোগ্রামে সর্বমোট ১,৩৪৪ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়ন করছে। গত ২৪ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৯৭৩, যা খুবই কম এবং বিশ্বে বিরল। গুণগত মান বজায় রেখেই বর্তমান অবকাঠামোতেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫,০০০ ছাত্রছাত্রীর অধ্যয়নের সুযোগ প্রদান করা সম্ভব।
বশেমুরকৃবি নানাভাবে উৎকর্ষতালাভ করলেও পিএইচডি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা (মাত্র ২৪ জন) দ্রুত কমে যাচ্ছে। ইপসা থেকে শুরু করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে, পিএইচডি প্রোগ্রাম। ইপসা ছিল কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আওতায় একটি বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঐসময়ে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল সিস্টেমের সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে ডেপুটেশনে বিজ্ঞানীরা এখানে পিএইচডি করতে আসত। তখন ভর্তির প্রথম শর্ত ছিল প্রার্থীকে অবশ্যই চাকুরীরত হতে হবে। গত জুলাই-আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এ শর্তটি তুলে দিয়ে মেধাবী মাস্টার্স ডিগ্রীধারীকে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি সহজ করা হয়েছে। পৃথিবীর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি’তে প্রার্থীকে অবশ্যই চাকুরীরত হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। ভর্তির ক্ষেত্রে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েটদের আকৃষ্ট করার জন্য বশেমুরকৃবির এমএস, পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির প্রাক-যোগ্যতায় উন্নত বিশ্বের ন্যায় প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা প্রয়োজন।
ফুলব্রাইট ভিজিটিং স্কলার হিসেবে দীর্ঘকাল যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি রাজ্যের নানা বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি যে, শিক্ষা, গবেষণা এবং শিল্পোন্নয়নে ব্যক্তির উৎকর্ষতা, উদ্ভাবন এবং নিবেদিত হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে, প্রাপ্য স্বীকৃতি, প্রণোদনা এবং যথাস্থানে পদায়ন। বশেমুরকৃবিকে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে চাই এসব নিয়ামকের প্রচলন এবং চর্চা। যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্রছাত্রীদেরকে শিক্ষায় নিবেদিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি টার্মেই ফলাফলের ভিত্তিতে ডিন্স লিস্ট, প্রেসিডেন্ট লিস্ট এবং চুড়ান্ত ফলাফলে নানারকম সম্মাননা যেমন-সুম্মা কুমলাউড প্রদান করা হয়। তবে বশেমুরকৃবি’র গ্র্যাজুয়েটদেরকে সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য স্বর্ণপদক কিংবা উল্লেখযোগ্য কোন স্বীকৃতি প্রদানের প্রচলন এখনও কেন শুরু হয়নি । অথচ দেশের প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফলধারীদেরকে সমাবর্তনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বর্ণপদক, চ্যান্সেলর পুরষ্কার এবং অন্যান্য এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। নর্থ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার পাশাপাশি নানারকম ক্লাব, প্রজেক্ট ওয়ার্ক এবং ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে প্রকৃত জীবন সংগ্রামে যোগ্য করে তোলা হয়। ফলে ৪ বছরের স্নাতক শেষ করার পরপরই অধিকাংশ ডিগ্রিধারী স্নাতকোত্তর পর্যায়ে না যেয়ে সরাসরি কর্মজীবনে প্রবেশ করে। বশেমুরকৃবিতেও এ ধরনের চর্চা আশু-প্রয়োজন। সম্প্রতি সিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে বশেমুরকৃবিতে কিছু ক্লাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যক্রম অতিরিক্ত/বহির্ভূত কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের নেতৃত্বদানের দক্ষতা অর্জন এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আরও ক্লাবের প্রচলন করা প্রয়োজন।
বশেমুরকৃবি’তে দেশের চাহিদা-ভিত্তিক মৌলিক এবং প্রায়োগিক গবেষণায় উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের স্বীকৃতি (বিশ্ববিদ্যালয় পুরষ্কার, চ্যান্সেলর পুরষ্কার) ও আর্থিক প্রণোদনার প্রচলন করা যেতে পারে। শিক্ষকগণ ও ছাত্রছাত্রীদেরকে বিশ্বপর্যায়ে মতবিনিময়, কোলাবরেশন এবং নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন/সিম্পোজিয়াতে অংশগ্রহণের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে কৃষিতে অগ্রসরমান প্রযুক্তির প্রয়োগ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কৃষি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অথবা ক্লাইমেট স্মার্ট-কৃষি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
বশেমুরকৃবি’তে সর্বমোট ২৩১ জন শিক্ষক, ১৪১ জন কর্মকর্তা, ২৬৭ জন কর্মচারী এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানবদিবস শ্রমিক কর্মরত আছেন। প্রায় ৪ শতাধিক কোটি সরকারি টাকা ব্যয়ে গত কয়েক বছরে নানারকম অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৯৭৬ । সাধারণ জনগনের টাকা ব্যয়ে ভৌত অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবহারের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে ক্রমান্বয়ে টার্গেটেড ৫,০০০ ছাত্রছাত্রী সংখ্যায় উন্নীত করার কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহন আশু প্রয়োজন।
বশেমুকৃবি’র শিক্ষা ব্যবস্থায় এমএস এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম এদেশে অনন্য এবং নর্থ আমেরিকার সাথে তুলনীয়। ইপসাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাপানের কিউসু বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরী সহায়তায় এবং জাইকা ও ইউএসএইডের অর্থায়নে এ প্রোগ্রাম দুটি সফলভাবে প্রচলন করা হয়। সুতরাং প্রোগ্রাম দুটি পুরোপুরিভাবে নর্থ-আমেরিকান কোর্স-ক্রেডিট সিস্টেমে চলছে। কিন্ত পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে চালুকৃত বিএস প্রোগ্রামগুলো পুরোপুরি নর্থ-আমেরিকান কোর্স-ক্রেডিটের ন্যায় হয়নি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ন্যায় বিএস প্রোগ্রামেও মেজর, মাইনর, ইলেক্টিভ কোর্সের সমন্বয়ে এমনভাবে পরিমার্জন করা প্রয়োজন, যেন ছাত্রছাত্রীরা সবগুলো ফিক্সড কোর্স নয় বরং নিজেদের পছন্দ মোতাবেক কিছু কোর্স বাছাইয়ের সুযোগ পায়। প্রকৃতপক্ষে, নর্থ-আমেরিকান কোর্স-ক্রেডিট সিস্টেমে কিন্ত তিনটি টার্ম সমানভাবে কার্যকরী নয়। সামার টার্মে, ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত কোন কোর্স না নিয়ে ইন্টার্ন হিসেবে এবং অন্যান্যভাবে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে। উল্লেখ্য, ছাত্রছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্নাতক পর্যায়ে ট্রাইমেস্টার থেকে সিমেস্টার পদ্ধতি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বশেমুরকৃবি’তে স্টুডেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমসহ, ছাত্রভর্তি, কোর্স রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার ফলাফল প্রস্ততকরণ ও প্রকাশে সর্বোচ্চ ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রচলন আশু প্রয়োজন। উদ্ভাবন এবং গতিশীলতা আনয়নে প্রশাসনিক পদে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষকগণকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে।
বশেমুরকৃবি’তে আইবিজিই’র সাফল্য বিবেচনায় রেখে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে জনবল এবং দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষা ও গবেষণার পরিকল্পনা গ্রহন করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, করোনা মহামারীকালেও একদিনের জন্যও আইবিজিইর গবেষণাগারগুলি বন্ধ থাকেনি। মেধা ও যোগ্যতার সমন্বয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এশিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির আদলে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণায় উৎকর্ষতার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে বলে আশা করা যায়। বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ৫০০ শত বিশ্বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে রেংকিং-এ দেশে প্রথম স্থান রক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী আরো অগ্রসর হতে হলে বশেমুরকৃবিকে গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ ও পরিকল্পিতভাবে নিবেদিত হওয়ার পদক্ষেপ জরুরী। অন্যথায় এ অবস্থানে টিকে থাকা কিংবা অগ্রসর হওয়া খুবই চ্যালেন্জিং হবে।
আমেরিকান কোর্স-ক্রেডিট সিস্টেম এ পরিচালিত একমাত্র এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বশেমুরকৃবি’কে এশিয়াতে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যে বিষয়সমুহ বিবেচনায় রাখা যেতে পারে সেগুলি হচ্ছে- (১) গবেষণার উৎকর্ষতা এবং একাডেমিক প্রোগ্রামের মানোন্নয়নে একটি স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন। (২) সকলক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা। (৩) দেশের চাহিদা-মাফিক জ্ঞান-সৃজন এবং জ্ঞানের প্রয়োগে অগ্রসরমান প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা কৃষকের মাঠে প্রয়োগে সরকারি এবং বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্টনারশীপ প্রতিষ্ঠা করা। (৪) শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং উৎকর্ষতার জন্য যথার্থ স্বীকৃতি ও প্রণোদনা প্রদান। (৫) নিয়মিত পাঠক্রমের হালনাগাদ এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রায়োগিক শিক্ষার স্বীকৃতিস্বরূপ নানা রকম পুরষ্কার/স্বীকৃতির প্রচলন করা। (৬) জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামর্থ্য এবং প্রভাব বৃদ্ধি করা। (৭) পিএইচডি এবং পোস্টডক্টরাল গবেষণাকে শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে আকর্ষণীয় ফেলোশিপ প্রবর্তন এবং বিদেশী গবেষকদেরও আকৃষ্ট করা। (৮) এমএস এবং পিএইচডি ভর্তির ক্ষেত্রে দেশের ও বিশ্বের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা। (৯) বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ল্যাব ও খামারসমুহে ছাত্রদের কাজ করার সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে আগামীদিনের উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। খামারসমূহ থেকে প্রোডাক্ট তৈরি করতে হবে। (১০) শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি, প্রোমোশন, সেমিনার-সিম্পজিয়ামে অংশগ্রহণের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে হবে। (১১) মার্স্টাস এবং পিএইচডি সুপারভাইজার কমিটিতে বিদেশী কোন প্রফেসর বা বিজ্ঞানী রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে বিশ^বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ কোলাবোরেশনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও উচ্চ শিক্ষার পথ সৃষ্ঠি হয়। (১২) বিশ^বিদ্যালয়ের প্রত্যেক পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব ইমেইল আইডি দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে শিক্ষাথীরা বর্হিবিশে^ গবেষণা ও পড়াশুনার জন্য যোগাযোগ সহজ হবে। (১৩) বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক এবং মানবকিগুণে করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সংগঠন যেমন বিজ্ঞান ক্লাব, বিজ্ঞান সোসাইটি, সাংস্কৃতকি ক্লাব, জার্নাল ক্লাব ইত্যাদি চালু করা প্রয়োজন। (১৪) সেমিস্টার শেষে বিজ্ঞানে কিভাবে ক্যারিয়ার গঠন করা যায়, এরকম অনেক ওয়ার্কশপ যেমন সায়েন্স কমিনিকেশন, সায়েন্টিক জার্নাল ও থিসিস রাইটিং ছাড়াও বিজ্ঞানের নিত্যনতুন বিষয়ের ওপর সেমিনার সিম্পেজিয়ামের আয়োজন করা।
(১৫) স্নাতক পর্যায়ে চূড়ান্ত বর্ষকে ইন্টার্নশিপ বা গবেষণার জন্য নির্ধারিত করে পাঠ্যক্রমকে বিশ্বমানের এবং হালনাগদ করা। (১৬) উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইনকুবেশন সেন্টার স্থাপন এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য একটি টেকনোলজি ট্রান্সফার এবং মেধাসত্ত্ব অফিস স্থাপন ও কার্যকর করা। (১৭) খেলাধুলা ও সাংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। (১৮) মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরকে নর্থ আমেরিকার ন্যায় ইউটিএ (আন্ডার গ্রাজুয়েট টিচিং এসিসট্যান্ট) এবং জিটিএ (গ্র্যাজুয়েট টিচিং এসিস্ট্যান্ট) নিয়োগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আয় এবং জ্ঞানার্জনের বাড়তি সুযোগ তৈরি করতে হবে। (১৯) অত্যন্ত মেধাবী তথা যেসব শিক্ষার্থী জিপিএ ৩.৯-এর বেশী অর্জন করে তাদের ঐ সিমেস্টারে টিউশন ফি ফ্রি করে দেওয়া যেতে পারে। (২০) শিক্ষকের সাথে সফল মিথস্ক্রিয়ার লক্ষ্যে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ জনের মধ্যে সীমিত রাখা সমীচীন হবে।
সবশেষে, বশেমুরকৃবি’র ২৭তম জন্মোৎসবে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল শুভানুধ্যায়ীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। জ্ঞান-সৃজন, সংরক্ষন, বিতরণের মাধ্যমে বশেমুরকৃবি স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হোক। আগামী বছরগুলিতে এ অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় একটি অনন্য উৎকর্ষতার কেন্দ্রে উন্নীত হোক।
ড. তোফাজ্জল ইসলাম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তিনি ২০০২ সালে জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এপ্লাইড বায়োসায়েন্স-এ পিএইচ ডি ডিগ্রিলাভ করেন। জেএসপিএস, হুমবোল্ড্ট, কমনওয়েলথ এবং ফুলব্রাইট ফেলেশিপের আওতায় জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পোস্টডক গবেষণা করেছেন। আমেরিকান ফাইটোপ্যাথলজিক্যাল সোসাইটি, বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির নির্বাচিত ফেলো ।