দবিরুল ইসলাম, দিনাজপুর।। দিনাজপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে (রাজবাটি) গবেষণা খামারে আজ সকাল ১০ টায় ”বারি সরিষা-১৮” জাতের উৎপাদন শীলতা ও উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ শীর্ষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল শারীরতত্ত¡ ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জনসংযোগ ও প্রকাশনা শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিনাজপুররের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হক। কৃষি গবেষণা কেন্দ্র দিনাজপুরের ইনচার্জ ও উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামসুল হুদার সভাপতিত্বে ৭০ জনের মত কৃষক অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর সিকদার বলেন বারি সরিষা-১৮ জাতটি অত্যন্ত উচ্চফলনশীল এবং শস্যক্রমে রবি মৌসুমে (নভেম্বর- ফেব্রæয়ারি) উপযুক্ত। এটি পরিবেশ বান্ধব ফসল, এর তেল অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ এতে ইরুসিক এসিড অত্যন্ত কম থাকে (১%) এই জাতটি কৃষক ভাইয়েরা চাষ করলে তারা আসলেই আর্থিকভাবে লাভবান হবে। তিনি বলেন শারিরিক গঠনে ও আমিষ যোগানে রন্ধনশিল্পে তৈল ফসলের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের আগামী দিনে তৈল জাতীয় ফসলের উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সেক্টরে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে পারলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান এর সৃষ্টি হবে এবং সাস্থ্য সম্মত, পুষ্টিযুক্ত, প্যাকেট জাত বোতলের মাধ্যমে গুনগত মানসম্পন্ন সরিষার তৈল সহজলভ্যভাবে পেয়ে ভোক্তাগন উপকৃত হবেন। বারি উদ্ভাবিত উন্নত জাতের তৈলবীজ এ লক্ষ্যে আশাতীত অবদান রাখবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি দিনাজপুর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে বেশী তৈল ফসলের ব্যবহার হয়ে থাকে। এ দেশে তৈলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে কিন্তু সেই তুলনায় আবাদ সীমিত পরিসরে হচ্ছে। আভ্যন্তরিন চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে, সয়াবিন ও পাম্প তৈল বিদেশ থেকে আমদানী করছে। আমদানী নির্ভরতা কমাতে হলে এদেশের চাষীদেরকে খুব যতœসহকারে অর্থকরী তৈলবীজ ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে। বার্ষিক শস্য প্যাটার্ন তৈরী করতে হবে পরিকল্পণা মাফিক। লাগসই কৃষি প্রযুক্তি দক্ষ ব্যবস্থাপনা আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে বারি উদ্ভাবিত উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল তৈল বীজের আবাদ বাড়াতে হবে। দিনাজপুর, রাজবাটি কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শামসুল হুদা বলেন বারি সরিষা-১৮ জাতটি নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে বপন করে ফেব্রæয়ারির শেষ হতে মার্চের ১ম সপ্তাহে উত্তোলন করা হয়। এই জাতে ইরুসিক এসিড ১.০৬% (সাধারন সরিষার ২০-২৫%) বিধায় ভোজ্যতেল হিসাবে ব্যবহারের উপযোগী। জাতটির ফলন প্রায় ২.০-২.৫ টন/হে. হয়ে থাকে এবং দিনাজপুর অঞ্চলের জন্য উপযোগী। ফসল ধারাতেও এই সরিষা যোগ করে কৃষক সহজেই লাভবান হতে পারবে।
সভাপতির বক্তব্যে তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোঃ সেলিম উদ্দীন বলেন যতই দিন যাচ্ছে ততই অবকাঠামোর উন্নয়নের কারণে তুলনামূলকভাবে আবাদী জমি কমে যাচ্ছে। এই জন্য উন্নত ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সল্পজমিতে উন্নত জাতের তৈল জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বত্রই তৈল ফসলের ব্যবহার বিরাজমান, দিনাজপুরের মাটি তৈল, গম, ভূট্টা, ধান ও শাক-সবজি আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে পরিকল্পণা মাফিক তৈল জাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতে হবে এই জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষি বিজ্ঞনী ও আদর্শ চাষীদেরকে এবং হাবিপ্রবি কৃতি কৃষি গবেষকদের সমন্নয়ে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন ৩৩ শতক জমিতে ক্যানোলা জাতের বারি সরিষা-১৮ সহজেই একটু যতœ করলে ৭ হতে ৮ মন তৈল জাতীয় দানাদার ফসল পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য মণ প্রতি ৩,৬০০/- হতে ৩,৮০০/- টাকা। অর্থ করি দানাদার শস্য তৈলবীজ আবাদ করে এদেশের মানুষ দারুন উপকৃত হচ্ছে। অত্র মাঠ দিবসে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বীজ প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. শামীম আরা বেগম, মোঃ আরাফাত হোসেন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বীজ প্রযুক্তি বিভাগ, বিএআরআই, গাজীপুর, মোছাঃ মাহবুবা খানম, বৈজ্ঞানক কর্মকর্তা, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, দিনাজপুর। তৈলবীজ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প (বারি অংশ) এর অর্থায়নে ও কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, দিনাজপুর এর আয়োজনে উক্ত মাঠ দিবস সম্পন্ন হয়। উক্ত মাঠ দিবসে ৭০ জন আদর্শ কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত হয়ে সরেজমিনে তৈল ফসলের মাঠ ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত হয়।