জানাক ও বৈষম্যবিরোধীর নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল

প্রকাশ:

Share post:

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে আসছে নতুন একটি রাজনৈতিক দল। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

তাদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে জানান, নতুন রাজনৈতিক দলের নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নেতাদের পছন্দের তালিকায় সম্ভাব্য নয়টি নাম রয়েছে। তবে, দলের নাম ইংরেজিতে নামকরণের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

নতুন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে তারা বলেন, নতুন দলে আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, যুগ্ম আহ্বায়ক, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পদ থাকছে। পাশাপাশি নতুন পদ তৈরির বিষয়েও আলোচনা চলছে। তারা বলছেন, আহ্বায়ক পদ বাদে কোনো পদেই এখনও নাম চূড়ান্ত করা হয়নি। একই সঙ্গে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাঠামো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

নাহিদ আখতার

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক কী হবে— তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্রনেতাদের পছন্দের সম্ভাব্য তিনটি নাম এসেছে। অন্যদিকে, সমর্থনের বিচারে এগিয়ে আছে তিনটি প্রতীক। জানা গেছে, বিএনপির মতো ইংরেজি নাম খুঁজছেন তারা। তিনটি নামের মধ্যে জুলাই আন্দোলনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নাম চূড়ান্ত করা হবে। পছন্দের নামের মধ্যে ‘জাতীয় বিপ্লবী শক্তি’, ‘বিপ্লবী জনতা সংগ্রাম পার্টি’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী নাগরিক আন্দোলন’— এই নাম তিনটি বেশি শোনা যাচ্ছে।

ছাত্রনেতাদের দাবি, ১২০ থেকে ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট নতুন দলের জন্য ইতোমধ্যে ৭০ জনকে বাছাইসহ শীর্ষ নয়টি পদের জন্য নয়টি নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও সেক্টর থেকে অনেকে এ কমিটিতে ভিড়তে চাচ্ছেন। কমিটির আকারের তুলনায় অধিক প্রার্থী হওয়ায় নেতা বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তবে, নতুন কমিটিতে যাদের রাখা হবে তাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা হচ্ছে বলেও একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অতীতের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, আইনের অপপ্রয়োগ, বিচারহীনতা, নির্বাচন ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন, সংবিধান সংশোধনের নামে কাটাছেঁড়ার মতো গণবিরোধী আর কোনো কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে যেন ঘটতে না পারে, সেজন্য নানা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ নেতৃত্বও বিগত সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে নতুনভাবে দেশ গঠনের লক্ষ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেয়। তারা ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইনও চালু করে। ওই ক্যাম্পেইনে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ যুক্ত হন। তারা রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীকের বিষয়ে মতামত দেন। তাদের মতামতের ভিত্তিতে দলে নাম ও প্রতীক চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।

মূল কমিটিতে থাকছেন এমন ৭০ জনের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম প্রায় চূড়ান্ত। তবে, সদস্য সচিব পদে কাকে মনোনীত করা হবে, সেটি নিয়ে চলছে যত আলোচনা। এ পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক হিসেবে সারজিস আলম, মুখপাত্র হিসেবে হাসনাত আবদুল্লাহসহ গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পদে চমক দেখাতে যাচ্ছেন ছাত্রনেতারা।

এদিকে গুঞ্জন আছে, দু-একদিনের মধ্যে উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তার পদত্যাগের পরই দলের বাকিদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলন শেষে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকারের বাইরে যারা আছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন কিংবা জাতীয় নাগরিক কমিটি; তারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে। আমি আমার জায়গা থেকে বলেছি, সেই দলে আমার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সেটি হলে সরকার থেকে পদত্যাগ করব। আমি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি; সম্ভাবনা আছে। হয়তো এ সপ্তাহের শেষে আপনাদের সবাইকে জানাতে পারব।’

জুলাই বিপ্লব

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে চললেও দলটির সাংগঠনিক কাঠামো এখনও চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে, মূল কমিটিতে থাকছেন এমন ৭০ জনের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম প্রায় চূড়ান্ত। তবে, সদস্য সচিব পদে কাকে মনোনীত করা হবে, সেটি নিয়ে চলছে যত আলোচনা। এ পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক পদে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক হিসেবে সারজিস আলম, মুখপাত্র হিসেবে হাসনাত আবদুল্লাহসহ গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পদে চমক দেখাতে যাচ্ছেন ছাত্রনেতারা। কেউ কেউ বলছেন, ছাত্র-আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন কিন্তু অপরিচিতি— এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে। এক উপদেষ্টার ভাইও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন:  রান্না করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু

নতুন দলের নির্বাচনী প্রতীক কী হবে— তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য চারটি প্রতীক নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে। এগুলো হলো- ‘মুষ্টিবদ্ধ হাত’, ‘হাতি’, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ ও ‘ইলিশ’। এগুলোর মধ্যে ‘ইলিশ’ বাদে বাকি তিনটি প্রতীক বেশি সমর্থন পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘গত ১৫ বছরে তরুণ নেতৃত্ব গঠিত হয়নি। কারণ, তরুণ নেতৃত্বকে রাজনীতি করার তেমন জায়গা দেওয়া হয়নি। ফলে দেশে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে। আমরা গত ছয় মাস ধরে তরুণ ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছি। যাতে নেতৃত্বের ওই সংকট দূর করা যায়। সেই জায়গা থেকে আমরা অনেকটা গুছিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। এটির আরও উন্নয়ন করার প্রয়োজন আছে। আমরা এ মাসে (ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি দল ঘোষণা করতে যাচ্ছি। আমাদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ চলছে। সবকিছু গুছিয়ে চলতি মাসের মধ্যেই আমরা দল ঘোষণা করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন দল গঠনের মাধ্যমে নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে, নেতৃত্বে কে আসবেন, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা আমাদের ফোরাম নিয়ে বসব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। আসলে জার্নিটা কিন্তু আমার নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। তবে, নেতৃত্বে যে-ই আসুক আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।’

নতুন দলের নাম প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন চলছে। এটির মাধ্যমে অনেক নামের প্রস্তাব এসেছে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছি। আমরা আশা করি, জনগণের মধ্য থেকেই নাম আসবে। এখনও সিলেকশন হয়নি, প্রক্রিয়াধীন আছে।’

সরকারের বাইরে যারা আছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন কিংবা জাতীয় নাগরিক কমিটি; তারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে। আমি আমার জায়গা থেকে বলেছি, সেই দলে আমার যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সেটি হলে সরকার থেকে পদত্যাগ করব। আমি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি; সম্ভাবনা আছে। হয়তো এ সপ্তাহের শেষে আপনাদের সবাইকে জানাতে পারব
নাহিদ ইসলাম, উপদেষ্টা, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে গত জুলাইয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম গঠন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় নেতৃত্বের সামনের সারিতে ছিলেন ২০২৩ সালের অক্টোবরে গঠিত ছাত্রশক্তির নেতৃবৃন্দ। শেখ হাসিনার শাসনামলে ধরপাকড়ের শিকার হয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না থাকা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন করা ছাত্র-অধিকার পরিষদও এতে যোগ দেয়।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ কমিটিতে বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা নেতাকর্মীরা যোগ দেন। ১৮৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিলুপ্ত ছাত্রশক্তির নেতা, শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তিন সভাপতিসহ অনেকে, এমনকি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন, গণ-অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি ও বিভিন্ন বাম দল থেকে আসা নেতাকর্মীরা যুক্ত হন।

এদিকে, নতুন দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশক্তি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা বাহাসে জড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে-অপরকে নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট দেওয়ার লড়াই দেখা যায়। শিবিরের সাবেক কয়েকজন নেতা দাবি করেন, ‘অভ্যুত্থানের বড় অংশীদার শিবির।’ অন্যদিকে, বিষয়টি নাকচ করে বিলুপ্ত ছাত্রশক্তির নেতারা বলেন, ‘অন্যদের মতো সহযোগী ছিল শিবির।’ তাদের এমন বাহাসে জড়িয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও।

আমরা গত ছয় মাস ধরে তরুণ ও যুবকদের নিয়ে কাজ করছি। যাতে নেতৃত্বের ওই সংকট দূর করা যায়। সেই জায়গা থেকে আমরা অনেকটা গুছিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। এটির আরও উন্নয়ন করার প্রয়োজন আছে। আমরা এ মাসে (ফেব্রুয়ারি) জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি দল ঘোষণা করতে যাচ্ছি। আমাদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ চলছে। সবকিছু গুছিয়ে চলতি মাসের মধ্যেই আমরা দল ঘোষণা করতে পারব
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক কমিটি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘আমার ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিতে আসা আখতার হোসেনের হাত ধরেই। এ দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ওনার ভালোবাসা সবসময় আমাদের মুগ্ধ করেছে। ঢাবি ক্যাম্পাসে একক নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নামক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবসময় রুখে দাঁড়িয়েছেন। সচেতন নাগরিক হিসেবে আখতার হোসেনের পাশে আছি। কাউরে নিয়া ষড়যন্ত্র কইরেন না।’

আরও পড়ুন:  খালাতো বোনের বিয়ে খেতে এসে ছাত্রলীগ নেতা আটক

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মির্জা গালিব ফেসবুকে লেখেন, ‘নাগরিক কমিটির উচিত ছিল অভ্যুত্থানের সাথে থাকা সকল তরুণদের নিয়ে একসাথে একটা রাজনীতি তৈরি করা।… মাদ্রাসা ছাত্রদের এবং শিবিরের যেন প্রপার পার্টিসিপেশন থাকে।… কিন্তু দুঃখজনকভাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি একটা গণতান্ত্রিক ইনক্লুসিভ পরিবেশ তৈরি করতে পারতেছে বলে মনে হইতেছে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের একাধিক নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভ্যুত্থানের পর গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক কমিটি। কমিটির সদস্যরা এখন নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষপদ নিয়ে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, ছাত্র-অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্যরা শীর্ষপদ চান। তবে, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক করা নিয়ে এখনও কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি। শুধু সদস্য সচিব ও মুখ্য সংগঠক নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে।

নতুন দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশক্তি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা বাহাসে জড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে-অপরকে নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট দেওয়ার লড়াই দেখা যায়। শিবিরের সাবেক কয়েকজন নেতা দাবি করেন, ‘অভ্যুত্থানের বড় অংশীদার শিবির।’ অন্যদিকে, বিষয়টি নাকচ করে বিলুপ্ত ছাত্রশক্তির নেতারা বলেন, ‘অন্যদের মতো সহযোগী ছিল শিবির।’ তাদের এমন বাহাসে জড়িয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও।

জাতীয় নাগরিক কমিটির এক নেতা জানান, যেহেতু নতুন রাজনৈতিক দলটি অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে চায়, তাই বিভিন্ন মতের মানুষও এর অংশ। শিবির চায়, তাদের সাবেক নেতারা নেতৃত্বে আসুক। অন্যদিকে একাধিক সূত্র বলছে, জাতীয় নাগরিক কমিটিতে থাকা শিবিরের অংশটি জুনায়েদকে নতুন রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব এবং শীর্ষ ১০টি পদের মধ্যে কমপক্ষে চারটি পদ দাবি করেছে।

রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক নিয়ে যা জানা গেল

এদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক কী হবে— তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্রনেতাদের পছন্দের সম্ভাব্য চারটি নাম এসেছে। অন্যদিকে, সমর্থনের বিচারে এগিয়ে আছে তিনটি প্রতীক। জানা গেছে, বিএনপির মতো ইংরেজি নাম খুঁজছেন তারা।

চারটি নামের মধ্যে জুলাই আন্দোলনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নাম চূড়ান্ত করা হবে। পছন্দের নামের মধ্যে ‘ছাত্র-জনতা পার্টি’, ‘জাতীয় বিপ্লবী শক্তি’, ‘বিপ্লবী জনতা সংগ্রাম পার্টি’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী নাগরিক আন্দোলন’— এই নাম তিনটি বেশি শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন দলের নির্বাচনী প্রতীক কী হবে— তা নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য চারটি প্রতীক নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে। এগুলো হলো- ‘মুষ্টিবদ্ধ হাত’, ‘হাতি’, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ ও ‘ইলিশ’। এগুলোর মধ্যে ‘ইলিশ’ বাদে বাকি তিনটি প্রতীক বেশি সমর্থন পাচ্ছে বলে জানা গেছে।

নতুন দল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশক্তি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা বাহাসে জড়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে-অপরকে নিয়ে নানা ধরনের পোস্ট দেওয়ার লড়াই দেখা যায়। শিবিরের সাবেক কয়েকজন নেতা দাবি করেন, ‘অভ্যুত্থানের বড় অংশীদার শিবির।’ অন্যদিকে, বিষয়টি নাকচ করে বিলুপ্ত ছাত্রশক্তির নেতারা বলেন, ‘অন্যদের মতো সহযোগী ছিল শিবির।’ তাদের এমন বাহাসে জড়িয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও।


সূত্র মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশ থেকে ছাত্র-নেতৃত্ব নিয়ে গঠিত হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলটি। এ দলে চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রিয়রা স্থান পাচ্ছেন।

গত ৫৩ বছরে সবগুলো রাজনৈতিক দল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এ বাস্তবতার আলোকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা কোনো বাইনারি রাখছি না, সবধরনের লোকই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রাইভেট, পাবলিক, ডান ও বাম— কোনো বাইনারিতে আমরা যাচ্ছি না। যাদের ক্যাপাসিটি ও ক্যাপাবিলিটি আছে, তারাই আসবেন- নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, আহ্বায়ক, জাতীয় নাগরিক কমিটি।

৩৫টি রাজনৈতিক দল থাকার পরও কেন নতুন দলের প্রয়োজন— এমন প্রশ্নের জবাব জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘৩৫টি দল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান। এটির মাধ্যমে তরুণদের রাজনীতি করার একটি প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এজন্য নতুন একটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজন। গত ৫৩ বছরে সবগুলো রাজনৈতিক দল কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এ বাস্তবতার আলোকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো বিকল্প নেই।’

নতুন দলে কারা প্রাধান্য পাবেন— জবাবের তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো বাইনারি রাখছি না, সবধরনের লোকই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রাইভেট, পাবলিক, ডান ও বাম— কোনো বাইনারিতে আমরা যাচ্ছি না। যাদের ক্যাপাসিটি ও ক্যাপাবিলিটি আছে, তারাই আসবেন।

#তথ্য ও ছবিঃ ঢাকাপোস্ট 

spot_img

সংবাদ সারাদেশ

কুয়েট উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নিন্দা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের পাবলিক...

ইটভাটায় কাজে গিয়ে নিখোঁজ সন্তানকে ফিরে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

মাদারীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরে একটি ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কোলচুরি গ্রামের ১৯...

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ নিয়ে যা বললো হেফাজতে ইসলাম

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বিবৃতি...

বাংলাদেশে ঢুকে পাঁচ কৃষককে বিএসএফ’র মারধর , গ্রামবাসীর ধাওয়া

ফুলবাড়ী ( কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষ্ণানন্দবকসী সীমান্তে বাংলাদেশে ঢুকে পাঁচ কৃষককে মারধর করেছে...

Discover more from bartabulletin.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading