হাবিপ্রবি, দিনাজপুর: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) মহান শহিদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে “অমর একুশের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের চেতনা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল ১১.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম-২ তে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহা. হাছানাত আলী। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির। সভাপতিত্ব করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসান, সঞ্চালনা করেন সহকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. আবুল কালাম। আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, চেয়ারম্যান, হল সুপার, প্রক্টর, বিভিন্ন শাখার পরিচালকসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান আলোচক প্রফেসর ড. মোহা. হাছানাত আলী তার বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা যে মায়ের ভাষায় কথা বলতেছি পাকিস্তানের শোষকরা এ কথা বলতে দিতে চায়নি, আমাদের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছিল। সেই সময় ছাত্ররা বুক পেতে দিয়েছিল, রক্তে রাজপথ লাল হয়ে গিয়েছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় যদি চব্বিশ এর কথা বলি, মনে আছে আপনাদের? একজন ছাত্রের টুটি চেপে ধরে এক পুলিশ অফিসার বলেছিল, কথা বলবি না। বায়ান্ন তে বলেছিল উর্দুতে কথা বলতে হবে, বাংলায় না। এইখানেই স্বৈরশাসক তথা ফ্যাসিস্টদের চমৎকার একটি মিল। তারা কথা বলতে দিতে চায়না। একুশের চেতনা ছিল আমরা স্বাধীনভাবে মায়ের ভাষায় কথা বলবো, সেটা বলতে দিতে চায়নি পাকিস্থান। একাত্তর আসলো, স্বাধীনতা যুদ্ধ করলাম, জীবন দিলাম, মায়েরা ইজ্জত বিলিয়ে দিলো, আমরা স্বাধীন হলাম। ভেবেছিলাম স্বাধীনভাবে কথা বলবো, শোষিত হবো না, কিন্তু ১৭ বছর আমাদের শোষণ করলো কারা? পাকিস্তানের লোকেরা? না, এদেশে জন্মগ্রহণ করা কিছু মানুষই আমাদের শোষণ করেছে, বঞ্চিত করেছে। আমাদের সন্তানদের হলে থাকতে দেয়নি, তাদের ছাত্র সংগঠন বাকশালি কায়দায় চাঁদাবাজি করেছে, সিট বাণিজ্য করেছে, মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আন্দোলনকে দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে, নিজের বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ ম্যাসাকার করলেন, পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এটা কল্পনা করা যায়না।
তিনি আরও বলেন, চব্বিশ এর চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সাথে জড়িত সকল শক্তিকে এক থাকতে হবে, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি করা যাবেনা। পরিশেষে, তিনি উক্ত আলোচনা সভা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, আজকের আলোচনা সভার টাইটেলের মাঝেই আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আমাদের করনীয় কি সব কিছুই আছে। তিনি বলেন, একুশের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এ আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। সেই সময়ও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল আমাদের তরুণ সমাজ চব্বিশ সালে এসেও আমাদের তরুণ সমাজকে আবার রাজপথে রক্ত দিতে হয়েছে। তারা ছিল সম্মুখ সারিতে, আর পেছনে কৃষক, শ্রমিক, জনতাসহ সাধারণ মানুষ।
তিনি বলেন, অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে একাত্তর সালে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছিলাম, কিন্তু দেখা গেলো স্বাধীনতার পরপরই একটা সরকার জনগনের স্বাধীনতার চেতনার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে, গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করে জাতিকে একটা দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়। আমাদের মনে আছে বাসন্তীরা গায়ে জাল জড়িয়ে কিভাবে লজ্জা নিবারণ করেছিল। বাঙালি জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি যার ফলশ্রুতিতে পঁচাত্তর সালে বিপ্লব হয়েছিল যা জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস নামে পরিচিত। একই চেষ্টা গত ১৭ বছর করা হয়েছিল যারই ফসল চব্বিশ এর বিপ্লব।
তিনি আরও বলেন, চব্বিশের চেতনা নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখতে সর্বদা সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পরিশেষে তিনি সুন্দরভাবে উক্ত আলোচনা সভা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।