নিজস্ব প্রতিনিধি: মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম জাকির হোসেন।
মঙ্গলবার মহান মাতৃভাষ দিবসে ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক প্রদত্ত বাণীতে বলা হয়, একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন। সব বাধা অতিক্রম করে বাংলাকে পাথেয় করে এগিয়ে যাওয়ার শপথের দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্ররণার অবিরাম উৎস। ভাষা হল মানবজাতির একটি অমূল্য সম্পদ। সেই ভাষার মাধ্যমেই মানুষ কথা বলে, সমস্যা সমাধান করে এবং পরস্পরের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মাতৃভাষা হল একটি মানুষের জীবনসত্ত্বা। এটি আমাদের আইন, আদর্শ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সংরক্ষণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধন। যেমন মানুষের জীবন ও প্রগতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মাতৃভাষাও সেরকমই গুরুত্বপূর্ণ।
‘একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের নিকট স্মৃতিবিজড়িত একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম কেবলমাত্র বাংলা ভাষার সংগ্রাম ছিল না। এ সংগ্রাম ছিল সারা দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ও বাংলাভাষীদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস। শুধু বাঙালি নয়, বিশ্বের প্রতিটি জাতির মাতৃভাষার মর্যাদা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের মতো বাঁচার দাবির সংগ্রামের দুর্জয় অনুপ্রেরণা সৃষ্টির চির অনির্বাণ শিখার দীপ্তিতে দিগন্ত উদ্ভাসিত করেছে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি। ৫২’র এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত অন্যতম। আর মহান এ ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে মহত্তর স্বাধীনতার চেতনা। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সাথে মিশে আছে বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের গৌরবগাথা ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বাঙালি জাতি পেয়েছে মাতৃভাষা বাংলায় কথাবলার অধিকার, পেয়েছে স্বাধীনতা। আর তারই সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাভাষা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মর্যাদা। একারনে “১৯৯৯ থেকে বিশ্ব জুড়ে মর্যাদার সাথে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে বিগত এক দশকে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নে বিস্ময়! মুক্তবুদ্ধির চর্চা, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় দেশে অত্যন্ত সুন্দর ও আন্তরিক পরিবেশ বিরাজ করছে।
আজকের এ দিনে গভীর কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদের প্রতি, যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছি বাংলা ভাষা, আমরা পেয়েছি কথা বলার স্বাধিকার। বিনম্র শ্রদ্ধা!