বার্তাবুলেটিন ডেস্ক: বাংলাদেশ ও বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো কৃষি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলামের আধুনিক জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের আলোকে বাংলায় রচিত সম্পূর্ণ নতুন বই জিনোম এডিটিং। এ ধরনের বইগুলো সাধারণত ইংলিশে হয়, যা আমাদের দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অনায়াসে বুঝতে পারা কিছুটা দুরূহ ও দুঃসাধ্য। জীবকোষে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য বা পরিবর্তন আনতে কোষের ডিএনএকে পরিবর্তন করার টেকনিক হলো জিনোম এডিটিং। প্রতিটি জীবের স্বাতন্ত্র এবং বৈশিষ্ট্যাবলি কোষের নিউক্লিক এসিডে (DNA/RNA) কোড আকারে লিখিত থাকে। এসব কোডকে পরিবর্তন করলে জীবের বৈশিষ্ট পরিবর্তিত হয়। জীবনের কোডকে কম্পিউটার সফটওয়্যার-এর মতো নিখুঁতভাবে পরিচালনার প্রযুক্তিই হলো জিনোম এডিটিং। জীব প্রযুক্তির এই কঠিন ও জটিল বিষয়গুলোকে সহজ এবং বোধগম্য করে তুলতে এবারই প্রথম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত হলো ‘জিনোম এডিটিং’ নামক বইটি। একুশে বই মেলার ‘মাতৃভাষা প্রকাশ’ এর ১৩৪-১৩৬ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি ।
বইটির বিষয়ে লেখক জানান, জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি আবিষ্কারের ইতিকথা এবং মানব কল্যাণে এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রয়োগ নিয়ে বাংলা ভাষায় লিখিত এটি প্রথম বই। এটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং আধুনিক বিজ্ঞানপ্রেমী সকল শ্রেণির পাঠকের চাহিদা কথা বিবেচনা করে লিখার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত প্রযুক্তি গুলোর মধ্যে জীবপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন, ইন্টারনেট অব থিংস, ন্যানোটেকনোলজি, রোবটিকস, থ্রিডি প্রিন্টিং, ফাইভজি ও ক্লাউড কম্পিউটিং উল্লেখ্যযোগ্য।
বইটির লেখক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম আরও জানান, জীবপ্রযুক্তিকে জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। জীবপ্রযুক্তির সর্বশেষ উন্নয়নগুলোর মধ্যে একটি হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, যেখানে কাঙ্ক্ষিত উন্নতির জন্য জীবের জিনোমে একটি নতুন বৈশিষ্ট্য বহনকারী জিন প্রবেশ করানো হয়। আর জিনোম সম্পাদনার সঠিক ও সময়োপযোগী প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দিতে পারে।
অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম ১৯৬৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার শশই গ্রামে বাবা মো. বজলুর রহমান এবং মা খালেদা খানমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসিএজি (অনার্স) এবং এমএসসি (এজি) উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন এবং পরবর্তীতে জাপানের হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত জীববিজ্ঞানে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। জেএসপিএস, হুমবোড, কমনওয়েলথ এবং ফুলব্রাইট ফেলোশিপ নিয়ে তিনি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জার্মানির খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক পোষ্ট-ডক এবং ভিজিটং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন।
অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিস্টিটিউট অভ বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এবং পুস্তকে তার ৩০০টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে গমের ব্লাস্ট রোগের মহামারি প্রাদুর্ভাবের উৎপত্তি নির্ণয় এবং জাতীয় ফল কাঁঠালের জিনোম রহস্য উন্মোচন করার জন্য তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। রসায়নে নোবেল প্রাইজ ২০২০ জয়ী বিপ্লব সৃষ্টিকারী ক্রিসপার-কাস জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষিতে তিনি সফল ব্যবহার করে চলেছেন। তিনি ও তাঁর দল জিনোম-নির্দিষ্ট প্রাইমার এবং ক্রিসপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে গমের ব্লাস্ট রোগের ছত্রাক দ্রুত সনাক্ত করার জন্য একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। জীবপ্রযুক্তি গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ড. ইসলাম ভূষিত হয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক স্ত্রী ও এক সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী ড. হাসনা হেনা বেগম একটি বেসরকারি সংস্থার উর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ এবং পুত্র তাহসিন ইসলাম সাকিফ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশুনা করছেন।
You must be logged in to post a comment.