বার্তাবুলেটিন ডেক্সঃ গণহত্যায় যেসব সাংবাদিক উসকানি দিয়েছেন এবং যারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে গণহত্যায় মদদ দিয়েছেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
মি. ইসলাম বলেন, ‘যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, উসকানিদাতা ছিল এবং গণহত্যার সমর্থন করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এর বাইরে অন্যায়ভাবে কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হলে, তা খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে।’
রোববার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহতদের খোঁজখবর ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নাহিদ ইসলাম। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের করা প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যদি কোনো সাংবাদিক বা তার পরিবার মনে করে যে, মামলার মাধ্যমে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের সহযোগিতা করবো।’
নিহতের স্বজনদের করা মামলার বিচার কবে হবে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিগ্যাল টিম কাজ করছে। আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।’
গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন; তারা দেশের বীর সন্তান উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্দোলনে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছেন। তাদের সেই আত্মত্যাগকে আমরা স্বীকৃতি দেই। আমরা অনুরোধ করবো শহীদ এবং আহতদের যেন আমরা কোনো দল বা ব্যানার দিয়ে ভাগ করে না ফেলি। আমরা যেন তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করি।’
এর আগে, ঢামেক হাসপাতালে আহতদের খোঁজখবর নেওয়ার সময় আন্দোলনে আহত জামাল হোসেন বয়স্কদের মাসিক ভাতা এবং তরুণদের চাকরির ব্যবস্থা করতে উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন। বিষয়টি আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে আসার আগে অনেকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের সেই খরচ আমরা দিয়ে দেবো।’
আহতদের বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আন্দোলনে আহত ও নিহতদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি চলমান। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনিও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘দ্রুতই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে, যাতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো মামলা না নেওয়া হয়।’
আন্দোলনকারীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যরা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ১২২ জনকে এদিন আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ থেকে এ অর্থ দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে চিকিৎসা সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সহায়তার চেক আহতদের হাতে তুলে দেন। পরে ঢামেক হাসপাতালে সাংবাদিকদের সামনে আহতদের অনুদান দেওয়ার হিসাব বিস্তারিত তুলে ধরেন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
তিনি জানান, আজ মোট ১২২ জনকে জনপ্রতি এক লাখ টাকা করে এক কোটি ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩০ জনের মধ্যে ২৩ জনকে জনপ্রতি এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। বাকি ৭ জনের নাম সম্পূর্ণ না থাকায় তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
তাছাড়া জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৩৩ জনের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন ৫৯ জনের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠানো হয়েছে।
মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জানান, এ পর্যন্ত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে ১৭৬ জন আহতকে মোট এক কোটি ৭১ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।