শেখ হাসিনা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে সারাদেশে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে জাতীয় মহাসড়কে ২০৯টি ব্ল্যাকস্পট বা দূর্ঘটনা প্রবণ স্থান চিহ্নিত করে ব্ল্যাকস্পট গুলোতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আরও ২৫২টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ১৭২টি ব্ল্যাকস্পটের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৮০টি ব্ল্যাকস্পট উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে ঐ সড়ক ও মহাসড়কে দূর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। মহাসড়কে গাড়ি চালাতে গেলে চালকদের যেন ঝিমুনি না আসে সে জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে বিশ্রামাগার তৈরির পাশাপাশি তাঁর সরকার চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে চালক পথক্লান্তিতে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু তাই বলে অদক্ষ হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। কাজেই এই বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আর পথচারিরা সতর্ক থাকলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটানা গাড়ি চালনা ও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে দুর্ঘটনা রোধকল্পে ‘টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পার্শ্বে পণ্যবাহী গাড়ী চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং মাগুরায় পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য ৪টি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রত্যেকটি এলাকা ভিত্তিক ভাবেই এটি আমরা করে যাব।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প, বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ‘রিভাইসড স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান’ এর আওতায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কম্যুটার রেলওয়ে, ভূগর্ভস্থ টানেল, ঢাকা শহরের চারদিকে রিং রোড, সার্কুলার রেল লাইন এবং ওয়াটারওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজধানীবাসী নিরাপদে ও দ্রুততম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
তিনি বলেন, মহাসড়কে পারাপার নিরাপদ করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার সেনানিবাস শুটিং ক্লাব পয়েন্টে আন্ডারপাস নির্মাণ ও জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে ১৩টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। আন্ডারপাসের স্থানীয় সুবিধা বিবেচনা করে ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২’ এর আওতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়কে ৩৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।
তাঁর সরকার ইতোমধ্যে ৬৩২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪-লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া ৬৪৭ কিলোমিটার মহাসড়কের উভয়পার্শ্বে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪-লেনে উন্নীতকরণ এবং ৭৯ কিলোমিটার মহাসড়ককে সার্ভিস লেন ব্যতীত ৪-লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের সরকার ২০০৯ থেকে বর্তমান মেয়াদে ১ হাজার ৪০১টি সেতু ও ৬ হাজার ৩৬০টি কালভার্ট নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ করেছে। প্রায় ৭ হাজার মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৫টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪ হাজার ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে ১৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১৫ হাজার ১৪২ মিটার রেলওয়ে ওভারপাস এবং ৭ হাজার ৩১২ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান এবং পরিকল্পনাধীন রয়েছে রয়েছে বলেও তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ১৩ বছরে যে আর্থসামাজিক উন্নতি আমরা করতে পেরেছি সেটা আমাদের জাতির প্রতি, দেশের তৃণমূলের মানুষের প্রতি আমাদের যে প্রতিশ্রুতি, সেটারই বাস্তবায়ন।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা যে চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন সেই উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্যই আমরা এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।