নিজস্ব প্রতিবেদক: চারদিকে পানি,মাঝখানে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আঁকা-বাঁকা আঞ্চলিক পিচঢালা পাকা সড়ক। আর সড়কের দুই পাশ দিয়ে রয়েছে ছোট-বড় অনেক গুলো মাছের ঘের।প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যে আচ্ছাদিত জলরাশির উপর গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান রেস্টুরেন্ট।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আরএমটিপি (মৎস্য) উপ-প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় এসডিএস (শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন খান বাবুল এর মাছের ঘেরে এই ভাসমান রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়। ভাসমান এই রেস্টুরেন্টের নাম ‘ভাসমান খান রেস্তোরাঁ’।এটিই শরীয়তপুর জেলার সবচেয়ে বড় ভাসমান রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টটির অবস্থান শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সাজনপুর ইউনিয়নের জাজিহার সেতু সংলগ্ন পম নামক এলাকায়।
আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বিকাল ৩ টায় শরীয়পুর জেলার এই বৃহত্তম ভাসমান রেস্টুরেন্টের উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে বাহারি রঙের আলোয় সজ্জিত করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট ও এর আশপাশের এলাকা। গত বছরের নভেম্বরে এই রেস্টুরেন্টের কাজ শুরু হলেও প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিসাসু ছুটে আসছেন এক নজর ভাসমান এই রেস্টুরেন্টটিকে দেখতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাবুল খাঁ এর মাছের ঘেরটি হওয়ার আগে জায়গাটির চারপাশে ভূতুড়ে পরিবেশ ছিলো। সহজে কেউ এদিক দিয়ে যাতায়াত করতো না। রাতে একাকী যাতায়াতে গা শিউরে উঠতো। ভয়ে গা ছমছম করতো। ঘেরটি হওয়ার পর সেই ভীতি কেটে যায়। এরপর ঘেরটিই পাশ ঘেষে শরীয়তপুর-চাদপুর সড়ক তৈরি হয়। তবে সড়কটি যানবাহন চলাচলেরও উপযোগী ছিলো না। দুই বছর আগে প্রায় সড়কটি সংস্কার ও বর্ধিত করা হয় এবং ঘের সংলগ্ন রাস্তায় জাজিহার সেতু নামে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সংস্কারকৃত এই জনপথটিই বদলে দিয়েছে এখানকার চিত্র। বর্তমানে সড়কটি ঘিরে দুই ধারে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কফি হাউজসহ বিভিন্ন রকমের বিনোদন কেন্দ্র। তারই মধ্যে বিশেষ আকর্ষন হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে ‘ভাসমান খান রেস্তোরাঁ’।
ভাসমান খান রেস্তোরাঁ এর পরিচালক খোকন খান জানান, পম এলাকায় বাবুল খান এর ২৩০০ শতাংশের মাছের ঘেরে ৫০ শতক জায়গায় পানির উপরে চার শতাধিক বড় আকারের প্লাস্টিক ড্রাম দিয়ে এই ভাসমান রেস্টুরেন্টটি তৈরি করা হয়েছে। প্লাস্টিকের ড্রাম, উপরে বিছানো হয়েছে কাঠের পাটাতন। সেখানে ১১টি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেই ঘরের ভিতর চেয়ার টেবিল বসানো রয়েছে। এতে একসঙ্গে শতাধিক অতিথির খাবারের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে কমিউনিটি সেন্টার, জন্মদিন উদযাপন, পার্টি সেন্টার, ইফতার পার্টি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া পরিচালকের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। এ লক্ষ্যে পুরো রেস্টুরেন্টে বাহারি রঙের বাতি লাগিয়ে নান্দনিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এসডিএস আরএমটিপি (মৎস্য) উপ-প্রকল্পের ভিসিএফ মোঃ আব্দুল জানান, পিকেএসএফ এর আরএমটিপি নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ উপ-প্রকল্পের মাধ্যমে এসডিএস কর্তৃক মাছের ঘেরে ভাসমান রেস্টুরেন্ট , নৌকা ভ্রমণ ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ফিশারিজ বেইজড ইকোট্যুরিজম উন্নয়নের লক্ষ্যে উদ্যোক্তাকে ৩ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। উক্ত সহায়তা এবং নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তার স্বপ্নের “ভাসমান খান রেস্তোরাঁ” নির্মাণ করেন। যা অত্র জেলায় ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমাদের প্রত্যাশা, এই ভাসমান রেস্টুরেন্ট বিকল্প আয়ের উৎসের পাশাপাশি ভ্রমণ পিপাসুদের মনের খোরাক জোগাবে এবং কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
You must be logged in to post a comment.