এম আব্দুল মান্নানঃ আমেরিকান ফাইটোপ্যাথোলজিক্যাল সোসাইটির (এপিএস) ১১৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম একজন বাঙালি এপিএস ফেলো হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড.মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম।
সোমবার (০৮ আগস্ট) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিভেনিয়া রাজ্যের পিটসবার্গ শহরের ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত এপিএস প্ল্যান্ট হেলথ ২০২২ এর এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড.মোঃ তোফাজ্জল ইসলামকে এই সম্মাননা সনদ তুলে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড.মোঃ তোফাজ্জল ইসলাম জানান, আমেরিকান ফাইটোপ্যাথোলজিক্যাল সোসাইটি (এপিএস) তার ১১৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন বাংলাদেশি (বাঙালি) গবেষক হিসেবে আমাকে এই এপিএস ফেলো অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে।তারা এ বছর সারা বিশ্বের ১০জন গবেষককে এই ফেলো প্রদান করে। যেখানে উত্তর আমেরিকার বাইরে আমিই একমাত্র ফেলো হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। বিশ্বমানের গবেষণার মাধ্যমে বাস্তব জীবনের নানাবিধ সমস্যা সমাধান, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক গবেষণার এবং আমার কর্মক্ষেত্র বশেমুরকৃবি’র আইবিজিই-তে আমার গবেষণা দলের স্বীকৃতি এবং দেশে ও বিদেশে শত শত সহযোগীর কারনে এই ফেলোর জন্য আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছে।বিশেষভাবে দেশের ক্রান্তিকালে ২০১৬ সালে গমের ব্লাস্ট রোগ যখন মহামারী আকারে দ্রুত ১৫,০০০ হেক্টর জমির ফসল বিনস্ট করে তখন আমার নেতৃত্বে আধুনিক জিনোমিক্স প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং মুক্ত বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ৬ সপ্তাহের কম সময়ে নতুন ছত্রাক জীবাণুটির কৌলিক বৈশিষ্ট এবং উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা এবং পরবর্তীকালে রোগ ব্যবস্থাপনায় তা প্রয়োগ বিশেষভাবে এ দূর্লভ এপিএস ফেলো এ্যাওয়ার্ড অর্জনে বিবেচনা করা হয়। আমি আমার কোলাবোরেটর বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জীববিজ্ঞানী প্রফেসর সোফিয়েন কামাউন,FRS কে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই, যিনি আমাকে এই মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ব পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন।প্রায় ডজন খানেক বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী সমর্থন করে সাপোর্ট লেটার লিখেছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের তরুণ গবেষকদের বিশ্বমানের গবেষকদের গবেষণা গবেষণার মাধ্যমে কৃষিতে উদ্ভূত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও আত্মবিশ্বাসী এবং অনুপ্রাণিত করবে।
উলেখ্য যে, অধ্যাপক তোফাজ্জল এর আগে তার অসামান্য গবেষণা কৃতিত্বের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অসংখ্য পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। অধ্যাপনা এবং গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি, ২০২২ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অফ এগ্রিকালচার এবং ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর ফেলো নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশী বায়োটেকনোলজি এ্যাওয়ার্ড,২০১৪ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক-২০১১,ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৮,রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ভোকেশনাল এক্সিলেন্স এওয়ার্ড-২০১৭, কমনওয়েলথ ইনোভেশন এওয়ার্ড-২০১৯,কেআইবি বেস্ট প্রেজেন্টার এওয়ার্ড-২০১৬ প্রাপ্ত হন। এছাড়াও অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম আমেরিকান ফাইটোপ্যাথোলজিক্যাল সোসাইটি (এপিএস), আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি সদস্য সহ আন্তর্জাতিক অনেক গবেষণা জার্নালের সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি নেচার গ্রুপ প্রকাশিত সায়েন্টিফিক রিপোর্টস, ফ্রন্টিয়ার্স ইন মাইক্রোবায়োলজি এবং প্লস ওয়ান জার্নালের এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।