হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী পরিচালক মোমিনুল ইসলাম (৩৮) ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রাজধানীর কল্যানপুরের বাংলাদেশ স্পেশালইজড হাসপাতালে (বিএসএইচ) মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেছেন অভিভাবকের লিখিত অনুমতি ছাড়াই ব্রেইন টিউমারে অস্ত্রোপাচারের নামে ভুল চিকিৎসা করায় রোগীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন দায় নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রোগীর (মোমিনুল) স্ত্রী রেশমা আক্তার শিউলি বলেন, গত মাসের ১৫ এপ্রিল স্বামীর চোখের সমস্যাজনিত কারণে রংপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা করানোর পর স্থানীয় চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কে ক্যানসার সন্দেহ করেন। তাদের পরামর্শে আমার স্বামীকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজ হাসাপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. রাজিউল হককে দেখাই। তিনি ব্রেইন টিউমারের কথা জানিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য লিখে ১৫ দিন পর যোগাযোগ করতে বলেন। এরপরে ২৫ এপ্রিল বিকালে রাজিউল হককে দেখানোর পর তিনি দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেন। এরপর অপারেশন এর বিস্তারিত বর্ণনা না করেই তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তারগণ সার্জারির ব্যাবস্থা করেন। গত ২৭ এপ্রিল বিকালে অপারেশন এর মাত্র এক ঘন্টা পরেই ডা.রাজিউল হক অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে বলেন তিনি টিউমার অপসারণ করে তার কাজ শেষ করেছেন। অন্যান্য ডাক্তারগণ অপারেশন শেষ করবেন। কিন্তু অপারেশনের পর তিন দিন পরেও রোগীর কোনো প্রকার অনুভূতি,জ্ঞান বা কথা বলার ক্ষমতা কোনো কিছুই ফিরে না আসায় আমাদের প্রশ্নের মুখে ডাক্তারের সহকর্মীগণ বলেন এই টিউমার সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব নয়। আমরা ৬০-৭০% অপসারণ করেছি, বাকিটা ৩ সপ্তাহ পর রোগীর সিজিএফ(অনুভূতি জ্ঞান) বৃদ্ধি হলে,ক্ষত সারলে এবং ইমিউনিটি ঠিকঠাক থাকলে তবেই রেডিয়েশনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ টিউমার অপসারণ করা হবে। অন্যথায় এই ধরনের গ্ল্যালন্ড-৪ (ক্যান্সার) আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকার অনুপাত খুবই সামান্য।
এ ধরনের মন্তব্যে আমরা হতবাক এবং মানসিক ভাবে ভেঙে পরি। পরবর্তীতে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জারি বিভাগের একজন অধ্যাপককে রিপোর্ট দেখানোর পর তিনি জানান,এই ধরনের কেইসে অপারেশনের পর রেডিওথেরাপি কোনো ভাবেই কাম্য নয়। প্রথমে রেডিওথেরাপি দিয়ে টিউমারকে সংকুচিত করে পরবর্তীতে অপারেশন করে প্রায় সম্পূর্ণ টিউমার অপসারণ করা সম্ভব হয়। এটাই উপযুক্ত চিকিৎসা।
এ ব্যাপারে কথা বলতে ডা. রাজিউল হকের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মনোয়ার সাদিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অস্ত্রপাচারের পূর্বে রোগীর অভিভাবকের লিখিত অনুমতি না নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে দেখবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বলেন, আমি মোমিনুলের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। পাশাপাশি যদি তার কোন ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় আমরা তা করতে সদা প্রস্তুত আছি।