বেকারত্ব কমাতে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার জরুরি

প্রকাশ:

Share post:

এম আব্দুল মান্নান: আয়তনগত দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৯৪তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ৮ম তম দেশ। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে প্রায় ১,২৬৫ জন (জাতিসংঘের জনসংখ্যা জরিপ ২০২০) লোকের বাস, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ আর বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। যা ২০২৩ সালে ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে বেকারত্ব বৃদ্ধির হার যেন পাল্লা দিয়ে চলছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশেষ করে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্নাতক পর্যায়ে যে সকল বিষয়ে পাঠদান করানো হয়, তার সঙ্গে শিল্পের চাহিদার একটি ব্যবধান রয়েছে। একজন ছাত্র উচ্চশিক্ষা নিয়েও কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে পারে না। কারণ তার শিক্ষা ও দক্ষতা যুগোপযোগী নয়। ফলে প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যেসকল গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশই দক্ষতার অভাবে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ছেন। অভাব পূরণে দেশের ভেতরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে ভারত, চীন, জাপান, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে অসংখ্য দক্ষ শ্রমিক আমদানি করা হচ্ছে।

আমাদের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মধ্যম আয়ের শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণে আমাদের দেশে বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠছে। যেমন—আমাদের দেশে তৈরি পোশাকের বিভিন্ন ব্র্যান্ড তৈরি হয়েছে। এই রিটেইল ব্যবসা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এ খাতে তৈরি হচ্ছে জনশক্তির চাহিদা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এসব খাতে যে ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন, তার অভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ফ্যাশন খাতে ভিজ্যুয়াল মার্কেটিং একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু আমাদের দেশে এ বিষয়ে পারদর্শী লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পোশাকশিল্পের সাপ্লাই চেইনে এ রকম আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে চাহিদানুযায়ী দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। পোশাক রপ্তানিতে অনেক সময় ক্রেতা পণ্যের ডিজাইন সরবরাহ করে থাকে, কিন্তু আমাদের স্থানীয় পোশাক ব্র্যান্ডগুলোকে নিজেদের পোশাকের ডিজাইন করতে হয়। কাজেই এখানে ফ্যাশন ডিজাইনারের চাহিদা রয়েছে। এ রকম আরো অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন জনবলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে দক্ষতাসম্পন্ন জনবল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ নিয়োগকর্তারা যা চান এবং চাকরিপ্রত্যাশীদের যে দক্ষতা রয়েছে, তার মধ্যে অমিল রয়েছে। এই দুইয়ের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে যে ব্যবধান, তা সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে একটি বড় অন্তরায়।

আরও পড়ুন:  সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বেরোবি ছাত্রলীগ নেতা পার্থর অভিনব প্রতিবাদ

বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মূল টার্গেট একাডেমিক সনদ পাওয়া কিংবা পরীক্ষায় ভালো ফল করা আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল টার্গেট গ্র্যাজুয়েট বের করা। অথচ দুপক্ষেরই টার্গেট হওয়া উচিৎ ছিল দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবমুখী পড়াশোনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। এ কারণে উচ্চশিক্ষিত হয়েও থাকতে হচ্ছে বেকার, মিলছে না চাকরি।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে না যদি অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় না করা হয়। শিক্ষাকে যদি কর্মমুখী করে তোলা যায়, তবে শিক্ষিত মানুষের চাকরি পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। একজন শিক্ষার্থী যখন কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন, তখন তিনি স্বাবলম্বী, আত্মনির্ভরশীল হবেন। ফলে তিনি তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান করে নিতে পারবেন। দক্ষ মানুষই পারে একটি দেশকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু দক্ষতা না থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, অদক্ষ মানুষ সমস্যার সমাধান করতে পারে না বরং সমস্যা বাড়ায়। তাই দক্ষ মানুষ তৈরিতে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যক্রম দরকার।

বাজারের চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে আমাদের দুটি বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমত, শিক্ষা, শিক্ষাবিদ এবং শিল্পের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে। এতে শিল্প বলতে পারবে তার কেমন জনশক্তি প্রয়োজন। এতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করা যাবে এবং সে অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হবে অর্থাৎ শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী করা যাবে। গতানুগতিক বিষয়গুলোতে ডিগ্রি প্রদান থেকে বেরিয়ে এসে নতুন নতুন বিষয়, যেগুলো বর্তমান বিশ্বে চাহিদা রয়েছে, সেগুলোকে শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণও প্রদান করতে হবে, যেন তারা কর্মক্ষেত্রে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে।

তাই বিলম্ব না করে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও বিশ্বের জাতিগুলোর উন্নয়ন ও প্রগতির ধারার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য শিক্ষাকে জীবনমুখী করে তোলার সময় এসেছে। জাতীয় প্রতিভার অপচয় আর অর্থনৈতিক প্রশ্ন বিবেচনায় এনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো একান্ত প্রয়োজন।

spot_img

সংবাদ সারাদেশ

ফুলবাড়ীতে আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ পালিত

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দ্বন্দ্বে কোন আনন্দ নাই, আপোষ করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোন চিন্তা...

ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ গ্রীন ভয়েসের ৭ দাবি

পরিবেশ সুরক্ষায় পুরনো যানবাহনের ব্যবহার বন্ধ করা ও কালো ধোঁয়া নির্গমন ঠেকাতে ফিটনেস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ ৭ দফা...

জানাক ও বৈষম্যবিরোধীর নেতৃত্বে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে আসছে নতুন একটি রাজনৈতিক দল। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ...

কুয়েট উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের নিন্দা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন দেশের পাবলিক...

Discover more from bartabulletin.com

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading