বার্তাবুলেটিন ডেস্ক: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় হয়েছে। এই বিজয়ের মাধ্যমে মানুষের মনে স্বস্তি ও শান্তির হাওয়া বইতে শুরু হয়। বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষ যেন তাঁর চাওয়া-পাওয়ার কথাগুলো বলার সুযোগ পেতে থাকে। শেখ হাসিনার ভারত ত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে মানুষের প্রত্যাশার বাঁধ যেন আরও ভেঙ্গে পড়ে। সবাই নিজ নিজ অধিকারের দাবিতে সচিবালয় কিংবা শাহবাগ কিংবা গণভবনে সমবেত হয়ে আওয়াজ তুলতে থাকে। পূর্বে এমন দাবি আদায়ে যদিও কাউকে কখনো সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। এর অন্যতম কারণ ছিলো; যারাই দাবি নিয়ে এসেছিলেন তারাই উপেক্ষিত কিংবা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকার মহাসমাবেশ করেন। এই সমাবেশের পরই বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপি ও তাঁর অঙ্গ সংগঠণসমূহের শত শত নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। এভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের উপর নানাভাবেই বিভিন্ন সময়ে দমন-পীড়ন চালানো হতো। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি,জামায়াত কিংবা অন্যকোন রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে সফল হতে পারেনি। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ তাঁর পাতানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠণ করে। যদিও এই নির্বাচনে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আপত্তি জানিয়ে আসছিল। সবকিছু উপেক্ষা করেই শেখ হাসিনা, সরকার গঠণের এক সপ্তাহের মধ্যে শপথ গ্রহণ এবং একমাসের মধ্যে মন্ত্রীসভা গঠণ করেন। চতুর্থবার সরকার গঠণের পর অহংকার,দাম্ভিকতা যেন আওয়ামীলীগ সরকারকে পেয়ে বসে। আগের থেকে আরও বেশি হিংস্র এবং দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন দলটির নেতাকর্মীরা। যার প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে। রিজার্ভ কমতে শুরু করে, জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে এবং প্রতিটি সেক্টরে লুটপাট ও নিয়োগ বাণিজ্যের মহোৎসব শুরু হয়ে যায়। এতে মানুষের মনে ক্ষোভের পারদ জমতে থাকে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৮ এর কোটা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে দেয়া পরিপত্র পুনর্বহালের মধ্য দিয়ে। নিয়োগে কোটা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনায় সারাদেশের ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। এক সময় এই আন্দোলন যোগ দেন মুক্তিকামী সাধারণ জনতা। যেখানে আওয়ামীলীগের নিজ দলীয় অনেক লোকের নিরব সমর্থন ছিলো।
২০১৮ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন হলেও ২০২৪-এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে সারাদেশের কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে এই আন্দোলন হয়। দীর্ঘ ৩৭দিন আন্দোলন এবং বহু জীবনের বিনিময়ে ৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ফ্যাসিবাদী প্রথা বিলোপ, সকল স্তরে বৈষম্য নিরসন এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের অঙ্গীকার থাকায় আন্দোলনের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু; ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠণের এক মাস পেরিয়ে গেলেও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে যায় এমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। বরং প্রতিক্ষেত্রে এখনো ফ্যাসিজম এবং বৈষম্য বিরাজমান। বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও সরকার পতনের পর আন্দোলনকারীদের চাপে বিচারপতি নিয়োগ থেকে শুরু করে মব জাস্টিসের মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের হাজত থেকে মুক্তি। বিগত আওয়ামী সরকারের ন্যায় ভিন্নমতের উপর দমন-পীড়ন, দোকানঘর ভাঙচুর, চাঁদাবাজি। আগের ন্যায় ছাত্রশিবির ট্যাগের পরিবর্তে ছাত্রলীগ ট্যাগ বসিয়ে বঞ্চিত ও হয়রানি করার চেষ্টা। আইনের তোয়াক্কা না করে মব জাস্টিসের মাধ্যমে হত্যা, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, ভিন্ন মতালম্বীদের সামাজিক মাধ্যমে তিরস্কার ও গালিগালাজের ঘটনা এখন হারহামেশাই চোখে পড়ছে। এছাড়া উপাচার্য নিয়োগ ও প্রশাসনে নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বিষয়কে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। সর্বোপরি, সাম্য-ন্যায় এবং বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গঠণের যে প্রক্রিয়া তা থেকে এই সরকার এখনো অনেক দূরে। তবে এদিক থেকে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। তাঁদের আমির ঘোষণা করেছেন , কারো সাথে শত্রুতা নয় সবার সাথেই বন্ধুত্ব। তবে, যে অপরাধী তাঁর ব্যপারে কেউ আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে তাঁকে সহযোগিতা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টাও অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের নিষ্পত্তি আইনের মাধ্যমেই চেয়েছেন। যেখানে অন্যরা ব্যতিক্রম। ফলে বিচারবহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রমের কারনে সবার মনে এখন সন্দেহ হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনা কে করছেন? অন্তর্বর্তীসরকার , ছাত্রসমাজ নাকি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ!</p