ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবারও ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জোরালো হয়েছে। তবে এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরোধিতার মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ার দাবিতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে রাতে ডাকসু নিয়ে ‘অলসতা’ ও ‘প্রশাসনিক টালবাহানা’র অভিযোগ তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান।
তবে ছাত্রদলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, শিবিরের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের কোনো সংগঠিত মিছিল ছিল না। তবে কিছু শিক্ষার্থী ডাকসুর দাবিতে মিছিল করেছে, যা আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি।’ তিনি আরও জানান, ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে ডাকসুর নীতিমালা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে এবং দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘ঢাবির শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ডাকসু নির্বাচন জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্ল্যাটফর্ম থাকলেও শিক্ষার্থীদের কোনো কার্যকর প্রতিনিধি নেই। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যমান পাঁচটি হলে স্থান সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা বললেই কিছু গোষ্ঠীর গায়ে জ্বালা ধরে, কারণ তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। প্রশাসন ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের সমর্থন রয়েছে।’
এদিকে, একতার বাংলাদেশ নামক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া উচিত। কেউ কেউ সিন্ডিকেট বহাল রেখে নির্বাচন না করার কথা বলছেন, কিন্তু এটি বাস্তবসম্মত নয়। আওয়ামীপন্থীদের প্রভাব রোধ করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ডাকসু বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে, এর অংশ হিসেবে অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। তবে নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে গঠনতন্ত্রের অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের চাপের কারণে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে।