বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সফল হলেও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে এসে সত্য, ন্যায়, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেও তা বাস্তবে চর্চা করি না। এখানে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, অথচ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে, তবে যদি সহনশীলতার মাধ্যমে গণতন্ত্র চর্চা করা যায়, তাহলে তা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণের অধিকার ফিরে আসবে।
শুক্রবার দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাহেদা পারভীন সভাপতিত্ব করেন, যেখানে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম আল আব্দুল্লাহ, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরও আমরা একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ দেশ গড়তে পারিনি। আমরা সংকীর্ণ রাজনীতিতে আবদ্ধ থেকে নৈতিকতার অবক্ষয়ের চরম অবস্থায় পৌঁছেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আবারও একটি নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি—সেই স্বপ্নটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে উন্নত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করছি। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি, তারপর গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি, কিন্তু ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এখনো সফল হতে পারিনি।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা কঠিন সময় পার করেছে—জীবন দিয়েছে, নির্যাতন সহ্য করেছে। শত শত নেতাকর্মী গুম হয়েছে, লাখো মামলা হয়েছে, অনেককে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছে। এত কিছুর পরও আমরা সংকীর্ণতা থেকে বের হতে পারছি না। তাই এখন সময় একসঙ্গে উঠে দাঁড়ানোর, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে একটি সুস্পষ্ট ও ইতিবাচক দিকনির্দেশনা নির্ধারণের।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি আমি টেলিভিশনে দেখলাম, দেশের তরুণ প্রজন্ম নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ নিয়ে ভাবছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের চেতনায় পরিবর্তনের কথা বলছে। এটি আমাদের জন্য আশার সঞ্চার করে। তবে আমাদের পরস্পরের প্রতি সহনশীল হতে হবে, নেতিবাচক মনোভাব পরিহার করে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হবে। দেশপ্রেম ও ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা এই পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিতৃপ্তচিত্তে বিদায় নিতে পারতাম, যদি নিশ্চিত হতে পারতাম যে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ভালোবাসার এক দেশ হয়েছে। কিন্তু আমরা কী কঠিন সময় পার করেছি—১৫ বছর আমরা ভোট দিতে পারিনি! এ কেমন গণতন্ত্র, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ হারিয়েছে? গত ১৫ বছরে দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে মোট ২৮০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসন জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিজেদের হাতে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে। তবে আমরা এখন সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার এক নতুন সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’