বার্তাবুলেটিন ডেক্সঃ আসন্ন বাজেটে রপ্তানি খাতে উৎসে কর কমানো, শ্রমিকদের রেশনিং বরাদ্দ রাখাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।সংগঠনটি বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, নীতি সহায়তা অব্যাহত না রাখলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বিজিএমইএ সভাপতি এসএম মান্নান কচি। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি ও সংসদ-সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবং সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
এসএম মান্নান কচি বলেন, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। এ সময় আমেরিকা ও ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ, পোশাকের দাম কমেছে ৮-১৬ শতাংশ। পক্ষান্তরে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে, শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পরিবহণ খরচসহ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে বাজেটে নীতি সহায়তা প্রয়োজন।
এর মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে- উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে আগামী ৫ বছরের জন্য বহাল, নগদ সহায়তার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রণোদনা অব্যাহত রাখা। এছাড়াও রয়েছে পোশাক খাতকে পুরোপুরি ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিতে কর রেয়াত সুবিধা দেওয়া, শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ রাখা, নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়া এবং এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটার (ইআরকিউ) ওপর আয়কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা।
এসএম মান্নান বলেন, বিজিএমইএ’র নতুন কমিটি নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী কর্মপন্থা নির্ধারণ করে কাজ শুরু করেছে। আরএসসি-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন; ব্যবসা সহজীকরণ, বিশেষ করে এনবিআর ও ব্যাংকসংক্রান্ত জটিলতা কমানো, ২০২৯ সাল পর্যন্ত নগদ সহায়তা অব্যাহত রাখা, এক্সিট পলিসি এবং এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি সুবিধা প্রবর্তনের চেষ্টা চলছে। এছাড়া পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণসংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ, শ্রমিকদের ফুড রেশনিং, পণ্যের ন্যায্যমূল্য, ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ, ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন, পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরিতে শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ম্যান- মেইড ফাইবারভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ নীতিসহায়তার লক্ষ্যে বর্তমান কমিটি কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, পণ্য খালাসে কাস্টমস হয়রানি, বন্ড অডিট এবং ভ্যাটের জটিলতা নিরসনে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাস কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। রপ্তানির পণ্য ছাড়করণে ও পণ্য চালান জাহাজীকরণে ওজনের ক্ষেত্রে এবং এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং কাটিং তদারকির শর্তের নামে হয়রানির বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি যারা রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করে, রপ্তানিকারকদের হয়রানি করে এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি।
এসএম মান্নান কচি বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক শিল্প হতে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকারের নীতিসহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই সহায়তা না পেলে লক্ষ্যে পৌঁছানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আমাদের প্রত্যাশা সরকার শিল্পের সব সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। সহযোগিতা কোনো কারণে বন্ধ হলে শিল্প প্রতিযোগী সক্ষমতা হারাবে, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সরাসরি রপ্তানিমুখী কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজার থেকে কমে দুই হাজার ২০০তে নেমে এসেছে। বন্ধ কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে পারলে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পেত এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো। তবে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত হিসাবে পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা ও সক্ষমতা রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং আরও কর্মসংস্থান তৈরি করার। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা।